সারা বাংলা

গাড়ির জট, তলা ফাটার শঙ্কায় হরিণা ঘাটে বড় ফেরি নেই

চাঁদপুরে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় হরিণা ঘাটে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলা হয়েছে। এই সিসি ব্লকে চাঁদপুর-শরিয়তপুর রুটে চলাচলের বড় ফেরি আটকে যাচ্ছে।

সিসি ব্লকে আটকে গিয়ে তলা ফেটে যেতে পারে এই শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলেও হরিণা ঘাটে বড় ফেরি দিতে পারছেন না। অথচ এখানে একটি বড় ফেরি দেওয়া খুবই জরুরী।  

এ ব্যাপারে আলাপকালে বিআইডব্লিটিসি'র হরিণা ঘাট (ম্যানেজার কমার্স) আব্দুন নূর তুষার বলেন, ৬টি ফেরি এই রুটে গাড়ি পারাপার করে। সবগুলো কে-টাইপের ফেরি। আমরা চেষ্টা করছি এই ফেরিগুলো দিয়েই গাড়ি পারাপার স্বাভাবিক রাখতে। এমন কি জোয়ারে ঘাটে যাতে গাড়ি পারাপারে সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা হাই ওয়াটার ঘাট কিছুদিন পূর্বেই চালু করেছি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৫টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হচ্ছে চাঁদপুর-শরিয়তপুরের এই ফেরিঘাট। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিলারে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি ফেরি আঘাত করার ঘটনায় মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ভারি যানবাহনবাহী ফেরি চলাচল করতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া অতিরিক্ত স্রোতের কারণে কাঠালবাড়ী-মাওয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে ঢাকামুখী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপও রয়েছে। এতে করে সর্বদিকের চাপ যাচ্ছে চাঁদপুর-শরিয়তপুরের ফেরিঘাটে।

এ ব্যপারে চাঁদপুর পওর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নকিব আল হাসান বলেন, হরিণা ফেরীঘাট এলাকাটিতে প্রতিরক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে ঢাকার ডিজাইনে সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ রাখা হয়েছে। ডিজাইন বদলানোর সুযোগ নেই। তবে এই ঘাটে রো রো ফেরি চলাচল করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ প্রকৌশল বিভাগ চাঁদপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ফেরিতে করে গাড়ি পারাপার সহজতর করতে রো রো ফেরিঘাট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কাজে পূর্বের ঘাটগুলোর সাথে হরিণাঘাটে ১টি এবং শরিয়তপুরের আলুবাজারে নতুন করে আরও ১টিসহ মোট ২টি ঘাট করা হবে। এরমধ্যে আমরা ঘাট নির্ধারণে জায়গা পরিদর্শন শেষ করেছি। কাজটি করতে পারলে চালকসহ সকলে এর সুফল পাবে বলে আশা করছি।

এদিকে শরিয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ইজারাদার প্রতিনিধি রতন খালাশী এবং চাঁদপুর হরিণাঘাট ইজারাদার প্রতিনিধি জসীম ঢালী জানান, মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাট বন্ধের কারণে চাঁদপুর-শরিয়তপুর রুটে চলাচলকারী ফেরিতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে আরো ফেরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দিলে পারাপারে অপেক্ষারত গাড়ি চালকদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। তাছাড়া কাবেরী ফেরি বাদে বাকি ফেরিগুলো গাড়ির লোড বইতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই এখানে বড় ফেরি প্রয়োজন।

রফিকুল হোসেন শিকদার, মারুফ গাজী, হৃদয় ভূঁইয়াসহ একাধিক গাড়ি চালক জানান, তাদের গাড়ি নিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় কখনো কখনো ৩/৪ দিন লাইনে থাকতে হয়। অথচ বিআইডব্লিউটিসির লোকজন টাকার বিনিময়ে পরের গাড়ি আগে ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে নৌ পুলিশ দেখেও যেন দেখে না।

বিআইডব্লিউটিসি হরিণা ঘাটের টার্মিনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাঁচামালের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স হয়তো আগে দেই। এ ছাড়া পরের গাড়ি আগে দেওয়ার সুযোগ নেই।

চাঁদপুর হরিণাঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাওয়া ফেরিঘাট বন্ধের কারণে প্রায়ই হরিণা ঘাটে গাড়ির জট লেগে যায়। তবে গাড়িগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ফেরিতে উঠে নামে। আমি আসার পরে এখানে এমন কোন অভিযোগ পাইনি। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।