সারা বাংলা

নিজস্ব ভবন নির্মাণ হবে, উপজেলাবাসীর দাবি পূরণ

দেশের ৪৯২তম উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার  শায়েস্তাগঞ্জ। এ উপজেলার নিজস্ব ভবন নেই। ছিল জটিলতা। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের চেষ্টায় জটিলতা শেষ হয়েছে। সম্প্রতি ভবনের সয়েল টেস্ট শুরু হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি কর্তৃক সরকারি বরাদ্দে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ নিউফিল্ডে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা করার ঘোষণা দেন। পরে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর নিকারের (প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি) সভায় উপজেলা হিসেবে শায়েস্তাগঞ্জকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জুন শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি  অফিসে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে উপজেলার  অফিসের  আনুষ্ঠানিক  কার্যক্রম শুরু হয়।

২০১৯ সালের ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হয় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সেই সাথে উপজেলার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য বড়চর মৌজার ২৫টি দাগে ৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমতি দেয়া হয়। 

প্রথমে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য হিসেবে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯২ হাজার ৫৩৬ টাকা ১০ পয়সা বরাদ্দ হয়েছিল। ভূমি মালিকগণ ধার্য্যকৃত মূল্য গ্রহণে সম্মত না হওয়ায়  এ নিয়ে  বিরাট জটিলতার  সৃষ্টি হয়।

উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধানকল্পে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কমিটি সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

কিন্তু করোনার কারণে বিলম্বিত হচ্ছিল। এদিকে নতুন উপজেলা পেলেও স্থায়ী ভবন না হওয়ায় হতাশ হচ্ছিলেন উপজেলাবাসী। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর কমিটির সভায় ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইতিপূর্বে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র প্রেরণ করেন। এরই মাঝে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন ইশরাত জাহান।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ভূমি জটিলতা নিরসনে জোর দাবি জানানো হয়। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান আশু এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কথার সাথে কাজের মিল রেখে তিনি এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়  ২৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৬ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক জটিলতার অবসান ঘটে। তবে করোনা অতিমারির কারণে সয়েল টেস্ট করতে বিলম্ব হচ্ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে সয়েল টেস্টের কার্যক্রম।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার  দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিচিতি সভায় সকলেই উপজেলা পরিষদের ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট সকলের  সহযোগীতায় এই সমস্যার সমাধান  করতে পারায় ভালো লাগছে।  এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাবেক ও বর্তমান প্রশাসক স্যারের  প্রতি  আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সয়েল টেস্ট শেষ হলেই ভবন নির্মাণ শুরু হবে।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল বলেন, ‘এমপি আবু জাহির মহোদয় দাবি জানান। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা করেন দিয়েছেন। যাই হোক জটিলতা শেষ হওয়ায় সয়েল টেস্ট শুরু হয়েছে। এতে করে শায়েস্তাগঞ্জবাসীর দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হবে।’

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘শায়েস্তাগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেই বিবেচনায় এ স্থানটির উন্নয়নে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। ২০১৭ সালে উপজেলা হলেও অস্থায়ী ভবনে চলছে কার্যক্রম। জটিলতা নিরসনে কাজ করেছি। এবার জটিলতা শেষ হয়েছে। সয়েল টেস্টের কাজ চলছে। দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ও ব্রাহ্মণডুরা, নূরপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩৯ বর্গ কিলোমিটার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা। লোক সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। ভোটার প্রায় ৪৫ হাজার ৬৪১ জন।