সারা বাংলা

টাকা দিয়েও আশ্রয়ণের ঘর বঞ্চিত আলিয়ারা

‘মোর গরুলাও গেল, বাড়িও গেল। মোর আর থাকার কোনো জায়গা নাই।’ এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে এসে প্রলাপ গাইতে থাকেন আলিয়ারা। তার অভিযোগ হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শালা তানভীন হাসানকে আশ্রয় প্রকল্পের ঘরের জন্য ৬০ হাজার টাকা দেওয়া সত্ত্বেও তাকে ওই ঘর থেকে জোড় করে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ সময় ওই নারী ইউএনও আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও অভিযোগ করেন।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের খুঁজতে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে এসে এসব অভিযোগ করেন ওই নারী।  

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলা আলিয়া (২৫)।  নিজের দুটি গুরুই ছিলো তার সম্বল।  তবে তিনি মাথা গোজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা চাচ্ছিলের।  সেই আশাতেই নিজের দুটি গরু বিক্রি করেন তিনি।  গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা ইউএনওর শালা তানভীনকে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন।  তবে চার মাস যেতে না যেতেই ওই ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে।

আলিয়ারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, প্রায় দুই বছর আগে স্বামী তাকে ছেড়ে যান।  এরপর এক সন্তানকে নিয়ে তিনি তার দুলাভাই নঈমউদ্দীনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।  ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে জানার পর আলিয়ারা তদবির শুরু করেন।

আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তদারককারী তরিকুল ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিকের কথামত সে নিজের গাভী বিক্রি করে ইউএনওর শালাকে ৬০ হাজার টাকা দেন। পরে তারা আলিয়ারাকে তারবাগান এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ২ নম্বর ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেয়।

সেই ঘরে তিনি প্রায় চার মাস ধরে সন্তানসহ বসবাস করছিলেন। পরে তরিকুল ও মানিক আলিয়ারার কাছে আবারো ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হবে বলেও তারা আলিয়াকে হুমকি দেয়। টাকা দিতে না পারায় অভিযুক্তরা ১ সেপ্টেম্বর আলিয়ারাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি জানিয়ে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছে ৫ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগের বিষয়টি ইউএনওকে জানান।  অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে ১৩ সেপ্টেম্বর ইউএনও আব্দুল করিম ওই নারীকে নিজের কার্যালয়ে ডাকেন।  

সেখানে ইউএনও আলিয়ারাকে পুলিশ ও তার কার্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। একই সঙ্গে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করা হয় বলেও অভিযোগ করেন আলিয়ারা।

এ বিষয়ে জানতে ইউএনওর শালা তানভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ইউএনও আব্দুল করিম বলেন, ‘সেই মহিলা অনেক খারাপ ও মিথ্যে কথা বলেন।  তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আমার পা জড়িয়ে ধরলে আমার লোকেরা তাকে টেনে সরিয়ে দিয়েছে। আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোন সুযোগ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আলিয়ারা যদি টাকা দিয়ে থাকেন তাহলে এর দায় তার নিজের।  লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোজ নিবো।’