সারা বাংলা

সাভারে গৃহকর্মীকে নির্যাতন, ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

ঢাকার সাভারের একটি বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক নারী গৃহকর্মী। মঙ্গলবার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার সোনিয়া মার্কেটের মালিকের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

এদিকে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে গাজীরচট সোনিয়া মার্কেটের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী বাড়িতে কাজ করার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে যায়।  ফ্লোর মোছার সময় বাড়ির মালিক দেলোয়ার ছাড়া সে সময় বাড়িতে অন্য কেউ ছিলো না।  ওই সময় দেলোযার তাকে জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন।  হঠাৎ বাড়ির মালিকের স্ত্রী চলে আসলে উল্টো তাকে চর-থাপ্পর মারতে থাকেন৷ তার কোন কথাই শোনেনি মালিকের স্ত্রী লিপি। পরে লিপি ও তার দেবড়ের স্ত্রী তাকে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন।  দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আটকে রেখে লাঠি দিয়ে তাকে বেধরক পিটিয়ে জখম করা হয়।  একই সঙ্গে কেটে দেওয়া হয় গৃহকর্মীর মাথার চুল।

তিনি আরো জানান, বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও দেবর প্রথমে কেঁচি দিয়ে তার মাথার চুল কাটে। পরে ব্লেড দিয়ে নাইড়া কইরা দেয়। এরপর বাড়ির মালিকদেরই এক স্বজন তাকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে বাড়িতে পাঠায়৷ এ সময় মালিকের স্বজন তাকে ২৫০০ টাকা চিকিৎসার জন্য দিলেও তা কেড়ে নেন বাড়ির মালিকের স্ত্রী লিপি।

পরে ওই দিন রাতে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে আটক না করেই চলে আসে। পরদিন বুধবার সকালে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় লিপিকে।

ভুক্তভোগীর স্বামী আনিছুর রহমান বলেন,  'মঙ্গলবার থানাত গেছিলাম। পরে আইতে (রাত) পুলিশ ওই বাড়িত গিয়া বলে কাউরে পায় নাই। গতকাইলকা বেলা ১টার দিকে আবোর পুলিশ দেলোয়ারের ব্ড়িতে গেছিলো। আমরাও আছিলাম। পরে দারোগা কয়, দাড়া দেলোয়ার ভাইয়ের কাছে ট্যাকাপয়সা নিয়া দেই তোরা জাগা। ১৫ হাজার ট্যাকার চিকিৎসার জন্য দিবার চাইছেম পরে ৮ হাজার ট্যাকা দিয়া দারোগা আমাগো ঘর থাইকা বাইর কইরা দিছে। তখন দারোগা আর দেলোয়ার ঘরের মধ্যে আছিলো। এক ঘন্টার মতো থাইকা চইলা গেছে।’

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, ভুক্তভোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যেগুলো মারধরের। রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে গাজীরচট সোনিয়া মার্কেট এলাকায় মালিক দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে।

তবে মুঠোফোনে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার এক মহিলা কাজ করতে আইছিলো। আমি তখন নিচে ছিলাম। কিন্তু আমরা বউ আমারে খুব সন্দেহ করে। ওই কামের মহিলারে অযথাই বাইন্দা মারধর করছে। পরে গতকাল দুপুরে দারোগা ইউনুছ আসছিলো। তখন ওই মহিলারে চিকিৎসার জন্য ৮হাজার ট্যাকা দিছি। কইছি লাগলে আরও দিমু।‘

তবে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

তবে গতকাল অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে টাকা দিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেছেন কি না এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন।  সবশেষ বৃহস্পতিবার ৪টার দিকে দুই দিনেও কেন মামলা হয়নি। এ বিষয়ে এসআই ইউনুছের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তিনি বলেন, 'আমিতো মামলার এজাহার রেডি করে রাইখা আসছি। ওসি স্যার বলছে, আগে ধইরা নিয়া আসো। দেলোয়ার আর তার বউরে ধরতে বের হইছি ভাই।'

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, 'আমিতো ঘটনা জানি না। এরকম কেউ ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে কি না জানা নেই। তবে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।'