সারা বাংলা

সুবর্ণচর এখন শসার রাজ্য

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে প্রতি বছর ধান চাষ করে লোকসানের মুখে পড়তেন কৃষকরা। মেঘনা নদীর পাড়ে এ দুটি ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় জোয়ারে লবণ পানি ঢুকে ফসল নষ্ট করে দিতো। ফলে চাষাবাদ করে লাভতো দূরের কথা সময় মতো অন্যের কাছ থেকে নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে পারতো না কৃষকরা। তাই বিকল্প চিন্তা করে শসা চাষে ঝুকে তারা। বলা যায়, সুবর্ণচর এখন শসার রাজ্য।

যার যতটুকু জমি আছে তাতে শসা চাষ শুরু করে কৃষকরা। অল্প খরচে দাম বেশি পাওয়ায় শসা চাষ করে অনেকেই এখন ভাগ্য বদল করছেন। উপজেলার দেড় হাজার পরিবার এ শসা চাষের সঙ্গে যুক্ত।

দেখা যায়, চলতি মৌসুমে সুবর্ণচরের এই দুই ইউনিয়নে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির ওপর মাচায় সবুজের সমারোহ। মাঝে উঁকি দিচ্ছে হলুদ ফুল কিংবা থরে থরে ঝুলছে শসা। সেই মাচার নিচে ছোট পুকুরে করা হয়েছে মাছের চাষ। পাশাপাশি পাড়ে করা হয়েছে বরবটি, কুমড়া, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।

এখানকার শসা বিষাক্ত সার ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে বেশ। বীজ রোপণের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরা শুরু হয়। বিঘা প্রতি খরচের চেয়ে লাভ দ্বিগুণ হওয়ায় শসা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

চর ক্লার্ক ইউনিয়নের চাষি মো. ইউনুস বলেন, আগে এসব জমিতে আমরা ধান চাষ করতাম। কিন্তু ধান চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ি। তাই সবাই মিলে শসা চাষের উদ্যোগ নেই। শসা চাষ শুরুর পর আমরা খুব লাভবান হই। এক একর জায়গায় শসা চাষ করে আমরা প্রায় দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা রোজগার করি।

তিনি বলেন, শীতকালে পাড়ে শিম গাছ রোপণ করে আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাই। এ ছাড়াও নিচে মাছ চাষ করি। সব মিলে বছরে এক একর জায়গা থেকে ৩ লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা রোজগার করতে পারি। বর্তমানে আমরা পরিবার নিয়ে ভালো আছি। আমাদের অসুবিধা হলো এখানকার রাস্তা ভালো না। যদি সড়ক ভালো হতো তাহলে আমরা আরও ভালো দাম পেতাম।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চাষি সিরাজ মিয়া বলেন, মেঘনা নদীর পাড়ের এলাকা হওয়ায় জোয়ারের পানি এসে ফসল নষ্ট করে দেয়। তাই সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা বর্তমানে খুব ভালো আছি। তবে সড়কের বেহাল দশার কারণে পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন কৃষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বহুমুখী চাষাবাদ করে এই ইউনিয়নের কৃষকরা এখন অনেক ভালো আছেন। এখানে কৃষকদের জমি চাষাবাদে তেমন জ্ঞান নেই। সরকারিভাবে যদি কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ফলন আরও বাড়বে।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মোস্তফা বাজারের সবজি আড়তের মালিক হুমায়ন বলেন, এখানকার রাস্তা-ঘাটের বেহালদশা। এ কারণে ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা শসা কিনতে পারছেন না। আবার কিনলেও দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

সুবর্ণচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সুবর্ণচরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। উন্নত জাতের শসার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এবার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। সমগ্র উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।

নোয়াখালী জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, এ বছর নোয়াখালীতে ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। সুবর্ণচরের মাটি ও জমি শসা চাষে উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই এ উপজেলায় চাষ বাড়ছে। সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় সারা বছরই শসা-ক্ষিরা চাষ সম্ভব। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।