সারা বাংলা

মাঝরাতে দিনমজুর যুবকের চেষ্টায় বেঁচে গেলো এতিমদের চাল

মাঝরাতে বিষন্ন মনে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন দিনমজুর যুবক দেলোয়ার হোসেন (২৬)। সেখানে গিয়েই সন্দেহজনক দুই যুবককে দেখতে পেয়ে লুকিয়ে পড়েন তিনি। দেখতে পান মাদরাসার এতিমদের জন্য গোডাউনে রাখা খাদ্যসামগ্রী থেকে দুই বস্তা চাল নিয়ে পালাচ্ছে তারা। তৎক্ষনাৎ নিজের টর্চ লাইট ধরে একাই ধাওয়া করেন তাদের। তখনই চাল ফেলে পালায় চোরেরা। এতেই চুরির হাত থেকে বেঁচে যায় এতিমদের খাবার।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া জামিয়া মইনুল ইমলাম মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

যুবক দেলোয়ার হোসেন ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের বাসিন্দা। সে দৈনিক ভিত্তিতে এলাকায় মজুরের কাজ করে।

জানা যায়, মাদ্রাসাটিতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পড়াশোনা ও খাবার সরবরাহ করা হয়। ওই খাবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী রাখা হয় মাদ্রাসার একটি কক্ষে। সেই কক্ষের দরজার খিল ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দুই বস্তা চাল সরিয়ে ফেলেন ওই দুই যুবক। পরে দেলোয়ারের তাড়া খেয়ে চাল ফেলে পালায় তারা।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাতের দিকে বাড়ির সামনের সড়কে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি মাদ্রাসার ভেতরে দুইটা ছেলে ঢুকছে। পরে আমি পাশ দিয়ে নেমে দেখতে থাকি তারা কি করে। একপর্যায়ে দেখতে পাই তারা ওই গোডাউনের দরজার খিল ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দুই বস্তা চাল নিয়ে পালাচ্ছে। তখন আমি আমার হাতে থাকা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ওদেরকে ধাওয়া দিলে তারা চাল ফেলে চলে যায়। 

এদিকে দেলোয়ারের এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাদ্রাসাটির শিক্ষক আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমিতো ছিলাম না। পরে আমাকে ডেকে আনা হয়। এসে শুনতে পাই চোরেরা দুই বস্তা চাল নিয়ে পালাচ্ছিল। পরে দেলোয়ার এসে তাদেরকে ধাওয়া দিলে চোরেরা চাল ফেলে পালায়।’

তিনি বলেন, ‘এই মাদ্রাসায় এতিম শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাওয়ানো, পড়ানো হয়। এখানে যে খরচ হয় সেটার সংকুলান নানাজনের সহযোগিতা থেকে করে থাকি। এখান থেকে একটা কিছু খোঁয়া যাওয়া মানে এতিমদের পেটে লাথির সমান। তাদেরকে আরও বিপাকে ফেলার সমান। ফলে চুরি যাওয়া থেকে চাল রক্ষা করে দেলোয়ার হোসেন অনেক এতিমের খাবার রক্ষা করলেন।’

একই কথা বলেন হাতকোড়া বাজারের সিকিউরিটি গার্ড শুক্কুর আলী। তিনি বলেন, ‘চোরেরা উল্টা পাশ দিয়ে ঢুকছিল। দেলোয়ার দেখে ফেলে ধাওয়া দিলে চোররা পালিয়ে যায়। আর রক্ষা পায় এতিমদের খাবার।’

এ বিষয়ে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। আর চুরির বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’