কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নার্সদের অবহেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শিশু দুটির পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিশুরা হলো জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং জেলার রাজীবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। দুই শিশু গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জন্মগ্রহণ করে।
মারা যাওয়া এক শিশুর বাবা দিলীপ চন্দ্র রায় জানান, গত শনিবার জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। স্বাভাবিক জন্ম হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ারও ব্যবস্থাপত্র দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
দিলীপ রায় আরো বলেন, ওষুধ আর স্যালাইন নিয়ে এসে তা নার্সদের দিয়ে বাচ্চাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেন না। তারা রুমে বসে মোবাইলে ফেসবুক চালান। এখনও স্যালাইন অমনি (অব্যবহৃত) পড়ে আছে। সোমবার দুপুরে বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাটা মারা যায়।’
সন্তানের এমন মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী এই বাবা।
অপর মৃত শিশুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, ‘বাচ্চাকে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেন না। চিকিৎসার অভাবে কখন বাচ্চা মারা গেছে আমরা টেরও পাই নাই। তারা (নার্সরা) মোবাইল নিয়া ব্যস্ত। রোগীর সেবা করতে তাদের অনীহা।’
রবিউলের বাবা ফুল মিয়া বলেন, ‘বাচ্চা মারা যাওয়ার পর নার্সরা আমাদেরকে বলে বাচ্চা রংপুর নিয়া যাইতে হবে। মরা বাচ্চা নিয়া আমাগো রংপুর যেতে বলে। এরা ইচ্ছা করে আমার নাতনিকে মেরে ফেলেছে।’
ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, নার্সরা ডিউটি রুমে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোনো সমস্যার কথা বললে অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকি দেন।’
নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইন চার্জ কাকলী বেগম বলেন, ‘যে শিশু দুটি মারা গেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোনও অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর বিপরীতে ভর্তি আছে ১১৮ শিশু। নার্স সংকট থাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে ডিউটিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।’
কুড়িগ্রাম জেনারেল হানপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছেন। প্রয়োজনে আমি তদন্ত কমিটি করে দেবো। সেবা দিতে গিয়ে যদি তারা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে সেটা কাম্য নয়। সেবা, ভাষাগত কিংবা ব্যবহারগত বিষয়ে তারা যদি কোনও দায়িত্বে অবহেলা করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।