সারা বাংলা

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আকুতি বৃদ্ধা আছিয়ার

পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন আছিয়া খাতুন। তারপর থেকে কষ্টে নিমজ্জিত দিন পাড় করছেন। ক্ষুধা আর অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে চলেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। কখনও কখনও এই বৃদ্ধ বয়সে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করেন।

যদি কোনো সহৃদয়বান ব‌্যক্তির দেখা পান তাহলে হয়তো সেই যন্ত্রণা থেকে ওইদিনটিতে মুক্তিপান। একটু স্বত্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন, এখন তার বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আকুতি আছিয়ার।

সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে আছিয়ার। সবাই যার যার পরিবার নিয়ে ব‌্যস্ত। ছেলে কাদির মিয়া স্থানীয় একটি ছ’মিলে কাজ করে সংসার নিয়ে একাই থাকেন। কিন্তু সেখানে ঠাঁই হয়নি তার। ছেলের নিজের সংসার নিয়েই চলাই কঠিন, তার কষ্টের কথা ভেবে সেখানে যেতে রাজি নন আছিয়া। স্বামী আলী হোসেন স্থানীয় একটি ছ’মিলে দারোয়ানের কাজ করতেন। মৃত‌্যুর আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের জন‌্য জেলা সদরের চরশোলাকিয়া এলাকায় আড়াই শতাংশ জমি রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও বিভিন্ন ঋণের চাপে বিক্রি করেছেন তার ছেলে।

মানসিক চাপ আর অর্ধাহারে প্রায় ২ বছর ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ আছিয়া। এরপর থেকে তার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন ছোট মেয়ে সেলিনা খাতুন। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর জানতে পারেন তার মা শারীরিকভাবে ভীষন দুর্বল। প্রতিদিন তার যে ধরনের খাবার তার মাকে দেওয়া প্রয়োজন তার কিছুই করতে পারছেন না তিনি। এভাবে অসুস্থ মা’র ভবিষ‌্যত নিয়ে তিনিও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

মেয়ের জামাই মো. রুবেল মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি শহরে অন‌্যের ভাড়া করা মিশুক চালাই। প্রত‌্যেকদিন যা আয় করি, তাই দিয়া সংসার চলে না। কিন্তু ঊনারেও তো দেখা উচিত। অভাবের সংসারে ডাক্তারের কথামত বৃদ্ধা শাশুড়ির লাইগ‌্যা তেমন কিছুই করতে পারি না, খুব খারাপ লাগে। পরে এলাকার একজন সাংবাদিক ভাইয়ের কতায় শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলাম। যদি বয়স্ক ভাতা করা যায়। কিন্তু হেইডাও অইলো না বয়সের কারণে। তবে ঊনারা কইছে সুযোগমত ব‌্যবস্থা করব।’

শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিক ইমরুল হক শিল্পি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওই বৃদ্ধা প্রায়ই আমার বাসার দরজায় এসে বসে থাকেন। আমার স্ত্রী বিষয়টি লক্ষ‌্য করে প্রায় সময়ই উনার খাবারের ব‌্যবস্থা করে দেন। পরে আমি তার বয়স্ক বা বিধবা ভাতার পাওয়ার ব‌্যাপারে নিজে সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগও করি। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স না হওয়ায় ভাতা পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না।’

এ ব‌্যাপারে পঞ্চাষোর্ধ আছিয়া খাতুন রাইজিংবিডিকে জানান, ‘আগে সইলো শক্তি আছিল, তাই মাইনষের বাড়িত কাজও করতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ কি জানি হইলো, হাত পা শুধু কাপাকাপি করে। সইলো একটুও শক্তি পাই না, আর আমার পুলা-পাইয়ারও তেমন কোনো সামর্থ‌্য নাই, হেরা আমারে বালামন্দ খাওয়াইবো, আর চিকিৎসা করাইবো। অহন আল্লাহয় যে কয়দিন বাঁচায়, হেই কয়দিন বাঁচমু।’

শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘উনি আমার এখানে এসেছিলেন তার মেয়ের জামাতাকে নিয়ে। প্রথমত উনি জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী নন, হঠাৎ অসুস্থ তাই শারীরিক দুর্বলতা। তাছাড়া উনার জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মতারিখ অনুযায়ী বয়স ৫৫ বছর। আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী একজন বয়স্ক নারী বা বিধবা নারীকে ভাতা কার্ড প্রদানের জন‌্য ৬২ বছর হওয়া প্রয়োজন। তবুও আমি ঊনার কাগজপত্র ও মোবাইল নম্বর জমা রেখেছি এবং বলেছি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কোনো সুযোগ থাকে তাহলে অবশ‌্যই তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।’

বৃদ্ধা আছিয়া এখন সরকারি সেই সুযোগ আর সমাজের বৃত্তশালীদের দিকে তাকিয়ে আছেন। যদি সকলের সহযোগিতায় সুস্থ হতে পারেন, তাহলে হয়তো আরও কিছুদিন বেঁচে থাকবেন।