সারা বাংলা

তরমুজ থেকে গুড়, তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক মৃত্যুঞ্জয়

তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ছোটবন্ড গ্রামের তরুণ কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথম বারের মত তরমুজের গুড় উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তিনি। নতুন উদ্ভাবিত এ গুড়ের নাম দিয়েছেন ‘তোগুড়’। 

কৃষি বিভাগ বলছে- আখের গুড়, খেজুরের গুড়, তালের গুড় সবার পরিচিত। কিন্তু তরমুজ দিয়ে গুড় তৈরি এখন পর্যন্ত নতুন উদ্ভাবন। খাওয়ার অনুপযোগি তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদনকে গুড় শিল্পে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তরমুজ সুমিষ্ট ও উচ্চমূল্যের ফসল। কিন্তু কিছু কিছু তরমুজ সাইজে কিছুটা ছোট হয় বা আকার আকৃতিতে কিছুটা কম থাকে, ফলে গ্রেডিং এ টেকে না। যা ক্যাট নামে পরিচিত। এগুলো বিক্রি হয়না এবং অনেক সময় মাঠেই থেকে যায়। কোন কোন সময় বৃষ্টিতে পচে এগুলোর দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। কৃষক মৃত্যুঞ্জয় ঐ সমস্ত ক্যাট নিয়ে কোন রকম মেশিন ছাড়াই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরমুজ কেটে এর লাল অংশ বের করে নেট দিয়ে ছেঁকে জুস বের করে চুলায় জালিয়ে ‘তোগুড়’ তৈরি করছেন। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এ গুড় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল জানান, তিনি ২০১৯ সালে প্রথম তরমুজ চাষ শুরু করেন। পরপর তিন বছর তরমুজ চাষ করে ভাল সাফল্য পেয়েছেন। সফল তরমুজ চাষি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর তরমুজের রস মিষ্টি এবং পাতলা বলে তরমুজের রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে সফল হয়েছেন। 

তিনি বলেন, আমি প্রায় তিন কেজি গুড় তৈরি করে আমি নিজে, পাড়া প্রতিবেশী, উপজেলা কৃষি অফিসারসহ অনেককেই খাইয়েছি। সকলে প্রশংসা করেছে। অনেকেই ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছে। 

আগামীতে এর উৎপাদন আরও বাড়াবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মৃত্যুঞ্জয়। 

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, আমাদের দেশের গুড় শিল্প দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। একদিকে তাল ও খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি এ গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা তরমুজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সিজনে কৃষক অনেক সময় তরমুজের ন্যায্যমূল্য পাননা এবং তরমুজের ক্যাটগুলো বিক্রিও হয়না। 

তিনি বলেন, তরমুজের গুড় কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনা। বাণিজ্যিকভাবে ওই তরমুজ নিয়ে গুড় তৈরি করলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। ফসলের অপচয়ও রোধ হবে। আগামীতে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো কৃষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং মাঠে পরামর্শসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।