সারা বাংলা

সেন্টমার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকরা যেভাবে সময় কাটালেন

কুমিল্লার ‘উই আর ব্রাদার্স’ নামের একটি সংগঠন মেটংঘর যুব সমাজের পক্ষ থেকে ছয় দিনের বার্ষিক ভ্রমণে রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বের হয়। তাদের দলে ছিল ৪৩ জন যুবক। 

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন বেড়াতে গিয়ে বৈরি আবহাওয়া ও উত্তাল সাগরের ক্ষুব্ধ আচরণের কারণে চার দিনের জন‌্য আটকা পড়েন তারা।

এই চারদিনে ৪৩ সদস‌্যের দলটি কীভাবে সময় পার করলো? সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে চোখ রাঙানি পেয়ে কেমন লাগলো তাদের? অবরুদ্ধ সময়ের সেসব গল্প রাইজিংবিডির কাছে করেছেন ভ্রমণ দলের অন্যতম সদস্য কুমিল্লা মুরাদনগর থানার আকাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আহমেদ মোল্লার ছেলে আহমেদ বিপ্লব।

তার বর্ণনা মতে— গত শনিবার (১৬ অক্টোবর) ৪৩ জনের গ্রুপটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেন্টমার্টিনে যাত্রীবাহী জাহাজ যেতে না পারায় তারা স্থানীয় যাত্রীবাহী ট্রলার নিয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে আনন্দ হৈ-হুল্লোড়ের পর রোববার (১৭ অক্টোবর) ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। উত্তাল সাগরের ভয়াল চেহারা আর বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে দলটি।

বিপ্লব বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ করার পর আমরা রোববারে ফিরতে চেয়েছিলাম। তবে সাগরের অবস্থা খারাপ থাকায় ট্রলার কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়ে যেতে অপারগতা জানায়। আমাদের গ্রুপে লোকজন বেশি ছিল। এ খবর প্রশাসনের কাছে গেলে তারাও আমাদের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে নিষেধ করে। সে কারণে আমরা থেকে যাই। চারদিন সেখানে থাকতে হয়েছে। বেড়ানোর সময়টা আনন্দঘন ছিল। তবে আটকে পড়ার কারণে ধীরে ধীরে বন্দি হয়ে পড়েছি এমন বোধ হচ্ছিল। বন্দি হয়ে পড়েছি এমন ভাব যেন মনে চেপে বসতে না পারে সেজন‌্য নিজেদের হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছিলাম। 

‘এসময় আমরা সেন্টমার্টিনের মারমেইড রিসোর্টে ছিলাম। সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। মানিয়েও নিয়েছি। এদিকে পরিবার দুশ্চিন্তায় ছিল। তবে আমরা ভালো আছি জেনে তারা স্বস্তিতে ছিলেন।

‘মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সাগর একটু শান্ত হলো। আবহাওয়াও কিছুটা অনুকূলে ছিল। তখন আমরাসাগর পাড়ি দেওয়ার অনুমতি পাই। অবশেষে গ্রুপের সবাই টেকনাফ ঘাটের উদ্দেশ্যে ট্রলারে করে রওনা দেই।”

সেন্টমার্টিন মারমেইড রিসোর্টের মালিক তৈয়ব উল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘৪৩ জনের গ্রুপ সেন্টমার্টিন ত্যাগ করতে না পেরে আমার রিসোর্টে অবস্থান করেছিল। তাদের অভয় দিয়েছি। চেষ্টা করেছি যেন তারা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকে। আমার রিসোর্টের আঙিনায় নারকেল গাছে দোলনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এতে তারা কিছুটা বৈচিত্রের স্বাদ পেয়েছে। ফুটবল খেলেছে, প্রতীকী মানববন্ধন করে পরিবেশ রক্ষার দাবি জানিয়েছে। মজা করে সময় পার করার জন‌্য আমার রিসোর্টের পক্ষ থেকে চেষ্টার ঘাটতি রাখিনি। অবশেষে যখন সাগরের অবস্থা ভালো হলো- তখন প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের হাসিমুখে বিদায় জানালাম।’

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই ৪৩ জনসহ সেন্টমার্টিনে আটকে থাকা ১৪টি পর্যটকবাহী ট্রলার টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী ঘাটে পৌঁছায়।

সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড স্টেশন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকরা ফিরেছেন। এর আগে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় ভ্রমণে গিয়ে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েন তিন শতাধিক পর্যটক।’

সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৪টি ট্রলারে প্রায় ৪০০ মানুষ সেন্টমার্টিন ছেড়েছেন। এরমধ‌্যে পর্যটক ছিলেন অন্তত ৩০০ জন।’