সারা বাংলা

মাংসের চাহিদা মেটাবে উট পাখি!

ভোজনরসিকের পাতে মাংস মানেই গরু-খাসি-মুরগি। তবে এবার সেখানে দখল নিতে যাচ্ছে উটপাখিও। এ বিষয়ে গবেষণা করছেন ঢাকার সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআইএ)।

সেখানকার প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাণিজ্যিক খামারে উটপাখি পালনের বিষয়ে গবেষণায় ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এখন মাঠ পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও হালাল উটপাখির মাংস। এ কারণে আমিষের চাহিদা পূরণে এই পাখির চাষ ছড়িয়ে দিতে চান তারা।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, বছরখানেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিছু উটপাখি আনে বিএলআরআইএ। পরে এখানে প্রাথমিকভাবে এটির চাষ শুরু হয়। উটপাখির অবাধ প্রজনন, ডিম ফোটানো থেকে শুরু করে খাবার, লালন-পালন এবং এর মাংসের গুণাগুণ নিয়ে সবই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রায় ৩ বছর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে পাখিগুলো দেশের বিভিন্ন খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়েও উড়তে অক্ষম উটপাখি। এদের উচ্চতা হয় সাত থেকে আট ফুট পর্যন্ত। এছাড়াও ওজনে ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চতার মতোই বড় উটপাখির ডিমও। একেকটি ডিমের গড় ওজন প্রায় দেড় কেজি। বছরে একেকটি পাখি ডিম দেয় প্রায় ১০০টির মতো। মরুভূমির এই পাখি তৃণভোজী অর্থাৎ শুধুমাত্র ঘাস ও লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে চাষির পকেটের জন্যেও হুমকি হবে না এই পাখি।

উট পাখির মাংস খেতে কেমন- এমন প্রশ্নে বিএলআরআইএ-এর এই প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, এ পাখির মাংস বেশ সুস্বাদু। স্বাদ অনেকটা মুরগির মাংসের মতোই। তবে মুরগির মাংসের চাইতেও উটপাখির মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম, তাই এর মাংসের কদরও বেশ।

তিনি বলেন, ‘এতদিন অনেকেই সৌন্দর্যবর্ধন এবং শখে উটপাখি পালন করেছেন। অনেকে জানতেন না যে উটপাখির মাংস শতভাগ হালাল। এর লালন-পালনকে সহজলভ্য এবং এর মাংসকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা কাজ করছি। গুণাগুণ বিচারে উটপাখির মাংসের তুলনা হয় না।’

বিএলআরআইএ-এর মহাপরিচালক ড. আব্দুল জলিল বলেন, ‘বাংলাদেশে উটপাখির মাংসের খুবই চাহিদা রয়েছে। একটা সময় মানুষ বয়লার মুরগি খেতে ইতস্তত করতো। এখন বয়লার মুরগি দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তেমনিভাবে অদূর ভবিষ্যতে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে উটপাখির মাংস।’

ড. আব্দুল জলিল আরও বলেন ‘মানুষের খাবারে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি উটপাখির মাংস সুলভ মূল্যে তুলে ধরার জন্য আমাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই দেশে উটপাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’