সারা বাংলা

মাছের আঁশে রঙিন স্বপ্ন

কুমিল্লা সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুব আলম। বিশ বছর আগে নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে মাছ কাটা শুরু করেন তিনি। মানুষের মাছ কেটে দিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়েই কোনো রকমে চলছিলো তাঁর সংসার। প্রায় দশ বছর আগে একজনের পরামর্শে মাছের আঁশ ফেলে না দিয়ে সেগুলো শুকিয়ে রাজধানী ঢাকায় বিক্রি শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই বদলে যায় মাহাবুবের জীবনের গতিপথ।

মাছের আঁশ নিয়ে মাহাবুবের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। দুর্গন্ধযুক্ত মাছের আঁশগুলো এতোদিন পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এখন তা আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে মাহাবুবের জীবনে। প্রতি মাসেই মাছের আঁশ বিক্রি করে ভালো আয় হচ্ছে তার। তিনি ১৬ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। যাদের ৬ জন মাছের আঁশ সংগ্রহ করে শুকানোর কাজ করেন। বাকি ১০ জন মাছ কাটেন রাজগঞ্জ বাজারে।

কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে অরণ্যপুর ও ঝাকুনিপাড়া এলাকায় চরের মধ্যে মাহাবুবের লোকজন মাছের আঁশগুলো শুকানোর কাজ করেন। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাহাবুবের বেতনভুক্ত ৬ জন কর্মচারী ব্যস্ত সময় পার করছেন মাছের আঁশ শুকানোর কাজে। শুকানোর পর সেগুলো বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছেন গোডাউনে। সেখান কাজ করেন ১৭ বছরের মাসুদ রানা। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেলে আমরা নগরীর রাজগঞ্জ, টমছমব্রিজ, বাদশা মিয়ার বাজার, নিউ মার্কেট, পদুয়ার বাজার, রাণীর বাজারসহ আশ-পাশের বিভিন্ন বাজারে মাছের আঁশ সংগ্রহ করতে যাই। এরপর সেগুলো এনে পরিস্কার করে রাতে রেখে দেই। সকালে এগুলো শুকাতে নিয়ে আসি অরণ্যপুর ও ঝাকুনিপাড়া এলাকায়। দুপুরের মধ্যে শুকিয়ে গেলে সেগুলোকে বস্তায় ভরে নিয়ে গোডাউনে রেখে দেই।

মাসুদ রানা আরও বলেন, আমরা ৬ জন এই কাজে রয়েছি। প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাদে আমাদের ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন মালিক (মাহাবুব)। আমরা এতে আনন্দিত।

শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে মাহাবুব বলেন, দশ বছর আগে ঢাকার ওই ব্যবসায়ী আমাকে বলেছিলেন, আঁশগুলো পরিস্কার করে শুকিয়ে দিলে তিনি কেজি প্রতি ৪০ টাকা করে দেবেন। এরপর প্রথম দিন শুকিয়ে তাকে ১০ কেজি দিলে তিনি আমাকে ৪’শ টাকা দেন। এতে আমার আস্থা এবং উৎসাহ বেড়ে যায়। সেই থেকেই এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। এখন আমি মাছ কাটি না। আমি সবকিছু তদারকি করি। সবকিছুর খরচ বাদ দিয়ে মাসে আমার আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। 

তিনি আরও বলেন, আঁশগুলো শুকানোর পর বস্তায় ভরে গোডাউনে রেখে দেই। মাসে গড়ে ৬’শ থকে ১ হাজার কেজি মাছের আঁশ শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করে রাখি। মাস শেষে ঢাকা থেকে আসা পাইকাররা আমার বাড়ি থেকে এগুলো পিকআপ ভ্যানে বা ট্রাকে করে নিয়ে যান। পাইকারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি মাছের আঁশগুলো চীনে রপ্তানি হয়। সেখান থেকে এগুলো বিভিন্ন দেশে যায়। আমাকে দেখে এলাকার অনেকেই এখন এই কাজে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

মাহবুব আরও বলেন, দুর্গন্ধযুক্ত মাছের আঁশগুলো আগে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ছিলো। তবে এখন এই মাছের আঁশ আমার জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখন এই মাছের আঁশ নিয়েই আগামীর সুখ স্বপ্ন দেখি আমি। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, মাহাবুব আলম নামের ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে মাছের আঁশগুলো শুকিয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করছেন। সম্প্রতি আমরা এই বিষয়টি জেনেছি। শিগগিরই আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করবো এবং তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেব।

উন্নতমানের প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ক্যাপসুলের ক্যাপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ফেলে দেওয়া এই মাছের আঁশ।