সারা বাংলা

পুলিশের বিলে মাছ ধরা উৎসব

গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিল জলাশয় থেকে বর্ষার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। ভরা বর্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছ শিকার করলেও অল্প পানিতে দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার স্থানীয় ঐতিহ্য। আঞ্চলিকভাবে এ মাছ শিকার ‘ভাটা’ হিসেবে পরিচিত। একটি জলাশয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ একত্র হয়ে পল, ঠেলা জাল, টেটা এবং ঝাকি জালের সাহায্যে মাছ শিকারের পাশাপাশহৈ হৈ রব তোলে। যাতে এক আনন্দ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।   প্রাচীনকাল থেকেই এ এলাকায় ভাটা নামের মাছ ধরার উৎসব চলে আসছে। ভাটা নামে প্রকৃত অর্থ কি জানা না গেলেও দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরার আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে এই নামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাধারণত কার্তিক মাসের প্রথমদিক থেকে শুরু করে মাঘ মাস অবধি বিল, নদী ও খালে পানি কম থাকে তখনি দলবদ্ধভাবে ‘ভাটা’  মাছ ধরার প্রকৃত মৌসুম। এমনি এক “ভাটা”র আয়োজন করা হয় কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামে।

পুলিশের বিল নামে পরিচিত  জলাশয়ের পানি কমে যাওয়ায় আয়োজন করা হয় মাছ শিকারের। 

মিঠা পানিতে বেড়ে উঠা মাছের চাহিদা বেশি থাকায় পুলিশের বিলে মাছ শিকারে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মত। মাছ শিকারের আগে পুরো বিল জুড়ে পল উচিয়ে সবাই হৈ হৈ চিৎকারে মাতিয়ে তোলেন। তারপর একসঙ্গে সবাই পানিতে নামেন মাছ শিকারের জন্য। অনেক মানুষ েএক সঙ্গে বিলের পানিতে নামায়  মাছ ভয় পেয়ে পানির উপরেও ভেসে উঠে। আর তখন বিভিন্ন পদ্ধতির পাশাপাশি হাত দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দিনব্যাপী পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের স্থানীয়রা পুলিশের বিলে ভাটার আয়োজন করেন। এই ভাটায় আশেপাশের তুমলিয়া, বান্দাখোলা, বাঙ্গাল হাওলা এবং বক্তারপুর এলাকার লোকজন অংশগ্রহণ করে।

মাছ শিকারে আসা হায়দারুল ইসলামের জানান, আগের দিন রাতেই লোকমুখে জানতে পারেন দুর্বাটি পুলিশের বিলে ভাটা লাগবে। তাই সকালে নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে আসেন। অন্য বছর মাছের আধিক্য থাকলেও এ বছর মাছের সংখ্যা অনেক কম। তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পল চাপিয়ে একটি শৈল আর কিছু সরপুটি শিকার করতে পারেছেন। এতে আফসোস থাকলেও  এমন ঐতিহ্যে অংশগ্রহণ করতে পারাটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।   মাছ শিকারী মো. আজিজ বলেন, আজ তিনদিন ধরে এই ভাটার জন্য অপেক্ষা করছি। শুধু এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমি একটি বেল জাল বানিয়ে রেখেছিলাম। যেহেতু প্রতিবছর এমন একটি আয়োজন হয় তাই সব কিছু আগে থেকেই তৈরী করে প্রস্তুত ছিলাম। খুব বেশি বড় মাছ না পেলেও আমি একটি কাতল মাছ পেয়ে খুব খুশি। আশা করছি এমন উৎসব প্রতিবছর হবে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ মোমেন বলেন, আমাদের অত্র অঞ্চলের এটি একটি ঐতিহ্য। প্রতিবছর ব্যাপকভাবে এর আয়োজন করা হয়। আশেপাশের সবার অংশগ্রহণে এ দিনটি একটি উৎসবের আবহ তৈরী করে। আমরা চেষ্টা করি সব ধরণের সহযোগিতা দিতে। পাশাপাশি মিঠা পানির মাছ শিকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক। কিন্তু মাছের যোগান কমেছে আশংকাজনকভাবে। তাই সরকারিভাবে মাছ অবমুক্তকরণের চেষ্টা থাকবে আগামীতে।   কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. সাদিয়া রহমান জানান, বর্ষায় এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে যায়। বর্ষার পানি নামার পর জলাশয়গুলো শুকিয়ে যায়। আর ওই বিলগুলো অনেক দেশি মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ এখানকার মানুষের আমিষের বড় একটি উৎস।