সারা বাংলা

শেরপুরে হাতি ও মানুষের লড়াই

শেরপুরের সীমান্ত জনপদে বন্যহাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কমছেই না। বরং সাম্প্রতিককালে এ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলার শ্রীবরদী সীমান্তে ফের বন্য হাতির তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এতে ওই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের আতঙ্কে ঘুম নেই।  নিজেদের জান-মাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির তাণ্ডব।

অপরদিকে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক বেড়া স্থাপন প্রকল্প অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগণ এর থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শ্রীবরদী উপজেলায় ২০ টি গ্রাম রয়েছে। পাহাড়ি এই জনপদের ফসলি ক্ষেত এখন পাকা আমন ধান ও শীতের সবজিতে ভরপুর। হাতির দল সারাদিন পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে থাকলেও সন্ধ্যা হলেই খাবারের সন্ধানে নেমে আসে লোকালয়ে। কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল নষ্ট করে হাতিগুলো। ফলে চলমান রয়েছে হাতি ও মানুষের যুদ্ধ। 

গত এক সপ্তাহে হাতির দল খেয়ে, পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে বিস্তীর্ণ ক্ষেতের নানা ধরনের সবজির আবাদ নষ্ট করেছে হাতির দল। ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে, ঘন্টি বাজিয়ে আর মশাল জ্বালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না এই তান্ডবকে। এখন ওইসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ হাতির আতঙ্কে রাত জেগে জান-মাল রক্ষার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত খাবারের সন্ধানেই বন্য হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসছে। কয়েকদিন যাবৎ ভারত থেকে নেমে আসা শতাধিক বন্য হাতি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ওইসব এলাকায় বিচরণ করছে। গ্রামবাসী হাতির উপদ্রব থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচতে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ক্ষতির পরিমান উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা। তবুও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ জন্য দিন দিন বন্য হাতির তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।

স্থানীয় আদিবাসী নেতা ব্রতীন বারাক ওবামা বলেন, ‘আমাদের এই কৃষিনির্ভর পাহাড়ের মানুষের একমাত্র উপার্জনের উৎস এই কৃষি ফসল। কিন্তু হাতি ফসল খেয়ে সাবাড় করছে। হাতিগুলো মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িঘরেও হামলা করছে। ১৯৯৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত হাতির আক্রমণে অন্তত ৭০ জন মানুষ মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।’

তিনি আরো বলেন, ‘কতো কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। হাতির তান্ডব থেকে মানুষকে ফসল রক্ষা করতে সরকার ও এনজিও বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিলেও কিছুই কাজে আসেনি।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রশিদ বলেন, ‘আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ইতোমধ্যে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছি। আরও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা বরাদ্দ করা হয়েছে।’

শেরপুরের সীমান্তবর্তী মানুষদের হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর আদলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী সীমান্তের ১৩ কিলোমিটার জুড়ে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ করে বনবিভাগ। কিন্তু পরিকল্পনা ও লোকবলের অভাবে এ প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ায় গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি টাকা। প্রথমদিকে কাজে এলেও বর্তমানে অকেজো হয়ে আছে সোলার ফ্যান্সিং। প্রকল্প বাস্তবায়নের মানুষ না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না এটি। যে কারণে হাতির আক্রমণের শঙ্কায় লাখো মানুষ দিন পার করছে।