সারা বাংলা

বাস চলছে না, কক্সবাজারে পর্যটকদের ভোগান্তি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও দূরপাল্লার বাসের চাকা ঘুরছে না। চলছে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা হাজার হাজার পর্যটক।

ছুটির দিন সামনে রেখে একদিন আগে থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। ঠিক তেমনি গেল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ছুটির দিন থাকায় বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ পর্যটক ধর্মঘটের কারণে আটকে গেলেন। যদিও খুবই কম সংখ্যক পর্যটক অতি প্রয়োজনে আকাশপথে বিমানে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। তবে কিছু কিছু মিনিবাস কক্সবাজার টু চকরিয়া এবং চকরিয়া টু চট্টগ্রাম যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে এতে করে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে চট্টগ্রামের আশপাশ থেকে আসা পর্যটকরা বাড়ি ফিরছেন।

এদিকে, শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘটে বেশি সমস্যায় পড়ে গেছেন ঢাকা-কুমিল্লা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। তাদের বাজেটের বাইরে অতিরিক্ত থাকা-খাওয়া ও সময়ের ব্যাপারে সমস্যার কথা বলেছেন একাধিক পর্যটক।

কুমিল্লার লাকসাম থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা জালাল উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘নতুন পুত্রবধূসহ কক্সবাজারে এসে আটকে পড়ে গেলাম। আমরা এসেছি বৃহস্পতিবারে সকালে। হোটেলের রুম আগে থেকে বুকিং করা ছিল। বৃহস্পতিবার-শুক্রবার ২ দিন থাকার পর আজ শনিবার দুপুরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন শুনছি রোববারেও বাস চলবে না। এটা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গেলাম। রোববারে  বাড়ি পৌঁছাতে না পারলে আমার ক্ষতি হবে।’ 

শুক্রবার সারাদিন কক্সবাজারে ঘোরাফেরা শেষে বিকালে বাস কাউন্টারে এসে টিকিট নিতে পারেননি আসাদুজ্জামান-কুহিনুর দম্পতি। ঢাকা থেকে দুই দিনের জন্য কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন এই দম্পতি।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার-শুক্রবার দুইদিন বেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কক্সবাজার এসেছিলাম। শনিবারে চলে যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। কী আর করার। আরও দুইদিন থাকতে হচ্ছে। যা অবশ্যই ভোগান্তিকর।’

পর্যটক ইমরান শেখ বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে কক্সবাজারে অবকাশ যাপনে এসেছি। শুক্রবার থেকে শনিবারে ফিরে যাবো এমন সিদ্ধান্ত ছিল।  কিন্তু কাউন্টারে এসে শুনি গাড়ি বন্ধ। অফিসে জরুরি কাজ আছে, তাই আগামীকাল অফিসে যেতে হবে। এখন চরম ভোগান্তিতে পড়লাম।’

চাঁদপুর থেকে আসা ৩০ শিক্ষার্থীর গ্রুপ থেকে রায়হান ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে শুক্রবার কক্সবাজারে ঘুরতে আসি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এতদিন কক্সবাজারে ঘুরতে আসা হয় না। শুক্রবারে ছুটির দিনে সারাদিন ভালো লেগেছে। শনিবার কাউন্টারে এসে দেখি বাস বন্ধ এখন চরম বিপাকে পড়েছি। হোটেলের রুমও ছেড়ে দিয়েছি।’

শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের আগে আমরা আমাদের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সর্বদা সজাগ ছিলাম। দেশের বিভিন্ন জায়গার টিকিট বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু ধর্মঘটের পর টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। তা অনেকেই জানেন না বলে কাউন্টারে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আমরাও তাদের বলছি বাস চালু হলে টিকিট পুনরায় বিক্রি করা হবে।’

আন্তঃ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহ আলম জানান, প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর কোনো একটা সমাধান হয়ে ওপর থেকে নির্দেশনা আসলে ঠিক আগের মতো বাস চলবে। কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এই সাময়িক অসুবিধার জন্য পর্যটকসহ যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

এদিকে, বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে কক্সবাজার আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রভাব পড়েছে। আগে থেকে বুকিং দেওয়া রুমগুলো খালি পরে আছে।

হোটেল ম্যানেজার আদনান শরীফ জানান, বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে কক্সবাজারে অনেক আবাসিক হোটেলে বুকিং করা রুম খালি থেকে যাচ্ছে যা পর্যটন খাতে প্রভাব পড়ছে। অনেককে বাজেটের বাইরেও থাকতে হচ্ছে।

কক্সবাজান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানান, মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়ার পথে পরিবহণ ধর্মঘট দুঃখজনক ব্যাপার। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারছেন না। এজন্য বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পর্যটন খাত। পরিবহণ ধর্মঘটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে পর্যটন শিল্পে ধস নামবে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের সভাপতি  আনোয়ার কামাল জানান, ছুটির দিনে কক্সবাজারে ভিড় করেন পর্যটকরা। এখন শীতের শুরু হিসেবে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে পরিবহন ধর্মঘট খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আমরা চাই এ সমস্যার সমাধান হয়ে কক্সবাজারে আরও বেশি বেশি পর্যটক আসুক।

কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, গণপরিবহন বন্ধের বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার কথা। এরপরও কোনো অসুবিধায় পড়া পর্যটকরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।