সারা বাংলা

৪০ গ্রামের মানুষের ভরসা এক নৌকা 

যুগের পর যুগ দাবি উঠে আসলেও জয়পুরহাট সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর মাধবঘাটে এখনো হয়নি কোনো সেতু। ফলে একটি ডিঙ্গি নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে নদীর দুপাড়ের কয়েক হাজার মানুষকে।এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও এর নেই কোনো বাস্তবায়ন।

রোববার (৭ নভেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদের বেলআমলা ও পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসূলপুরের বুধইল গ্রামের মাঝামাঝিতে বয়ে চলেছে ছোট যমুনা নদী। নদী পার হওয়ার একমাত্র পথ মাধব ঘাট। এ নদীর মাধবঘাট থেকে জয়পুরহাট পৌরসভার দূরত্ব ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। সেতু না থাকায় যানবাহনযোগে জেলা শহরে যাতায়াত করতে প্রায় ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সদর উপজেলার মোহাম্মাদাবাদ, ধলাহার, দোগাছী ও পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী, আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে।

নদীপাড়ের শিক্ষার্থী পার্থ, রিপা, স্থানীয় আলম হোসেন, কৃষ্ণচন্দ্রসহ অনেকেই জানায়, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বর্ষাকাল আসলে নদীতে পানি বেড়ে যায়। তখন নদী পারাপার হওয়া যায় না। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। নদী দিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার পথ। এ নদীতে একটিমাত্র নৌকা থাকে, তাও ঠিক মতো পাওয়া যায় না। ফলে ১৫-১৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।

ঘাটের মাঝি বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই শুনতেছি এখানে সেতু হবে হবে। কিন্তু হয় না। অনেক লোকজন আসে, মাপযোগ করে আবার চলে যায়। এখন আমার বয়স ৫০ পার হয়ে গেছে। এ সময় ধরেই একই কথা শুনতেছি। এ পথ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের যেতে অনেক অসুবিধা হয়। এছাড়া বয়স্ক ও রোগীদেরও অসুবিধা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যার নামে এই ঘাট, সেই মাধবের আমি ভাতিজা, এই ঘাটে আমি ২৫ বছর নৌকা বাইছি, তার আগে আমার বাপ দাদারাও এই কাজ করেছে, আমার মাঝিগিরির দরকার নাই, দশের উপকারের জন্য আমি এখানে সেতু নির্মাণের দাবি করছি।’

আয়মা পূর্ব রসূলপুর মসজিদের ইমাম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এ পথ দিয়ে যাতায়াতের খুবই সমস্যা। অনেক মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যদি এখানে সেতু হয় তাহলে আমাদের আর এই ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

মুক্তিযোদ্ধা গনেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই শুনতেছি এখানে সেতু হবে। কিন্তু হচ্ছে না। রসুলপুর স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য এদিক দিয়ে অনেক ছেলেমেয়ে পার হয়। এদিক দিয়ে গেলে তিন কিলোমিটার আর শিমুলতলী দিয়ে গেলে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার ঘুরে জয়পুরহাটে যেতে হয়। এখানে সেতু নির্মাণে হলে আমাদের অনেক ভালো হবে।’

দুপাড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের বেলআমলা, বনরামপুর, মাঙ্গনিপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী, সুজন কুমার মণ্ডল, স্বপন হোসেন ও আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের আয়মারসুলপুর, গাসুরিয়া গ্রামের জাহিদ হোসেন, দিপা রানী, শায়লা বেগমসহ অনেকে জানান, শুধু মাত্র নৌপথ হওয়ার কারণে জরুরি সময় বিকল্প পথে যেতে অনেক ঘুরে শহরে যাওয়া বেশ কষ্টদায়ক রোগী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য। এছাড়া সময় মতো ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি সামগ্রী বাজারে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে, অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে ব্যাপক সমস্যা হয়। নদী পারাপার হতে না পেরে অনেককে পাঁচবিবির শিমুলতলী এলাকা দিয়ে ঘুরে জেলা শহরে আসতে হয়। এলজিইডি ডিপার্টমেন্ট মাপযোগ করেছে। এখন সেতু হলেই হয়।

আয়মারসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান  জাহিদুল আলম জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাধব ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার হবে।

জয়পুরহাট জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী  আলাউদ্দিন হোসেন জানান, নদীর দুপাড়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের জন্য দাবি করে আসছেন। এ নদী পারাপারের জন্য একটি সেতু জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করা দরকার। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এলজিইডি একাত্মতা পোষণ করছে এবং আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও এ ব্যাপারে সচেষ্ট আছেন। আমি এখানকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে একটি সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবো।