সারা বাংলা

বেড়া পৌর নির্বাচনে একই পরিবারে ৩ প্রার্থী

পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একই পরিবারের তিনজন। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা-ভাতিজি। সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর পরিবারের সদস্য। ইতোমধ্যে চাচা ও ভাতিজার সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে, তাদের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অন্য দুই প্রার্থী। নির্বাচনি সহিংসতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বেড়া পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থীরা হলেন—পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন, টুকুর ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুল বাতেন এবং টুকুর ভাতিজি (বড় ভাইয়ের মেয়ে) স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম সাদিয়া আলম। এছাড়াও প্রার্থী রয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কে এম আব্দুল্লাহ।

মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের পাশাপাশি হবে বেড়া পৌরসভার নির্বাচন। প্রচার ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। তবে, প্রতীক বরাদ্দের দিন সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নতুন প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হয়েছেন একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র আব্দুল বাতেন। কার গলায় উঠবে বিজয়ের মালা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

ধারণা করা হচ্ছে, মূল লড়াই হবে চাচা-ভাতিজার মধ্যে। ইতোমধ্যে তাদের সমর্থকরা কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে নির্বাচনী অফিস। আহত হয়েছেন অনেকেই। পরিস্থিতি যেন—কেউ কাউকে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান।

ছেলে আসিফ শামস রঞ্জনকে জেতাতে নিজ এলাকায় থেকে প্রচারে অংশ নেওয়া, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাংসদ শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ নভেম্বর টুকুকে নিজ এলাকা ত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান।

এ বিষয়ে আব্দুল বাতেন বলেছেন, ‘বেড়া পৌরসভায় ১৭ বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলেছি। আধুনিক নগর গড়ার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই জনগণের দাবির মুখে প্রার্থী হয়েছি। দল মনোনীত প্রার্থী আমার ভাতিজা হলেও রাজনীতিতে সে নতুন, অনভিজ্ঞ। তার তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না, জনগণের দাবির মুখে নির্বাচন করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংসদ টুকু নিজের ছেলেকে জেতানোর জন্য একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করেছেন। আমার নির্বাচরী প্রচারণায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছেন, সমর্থকদের হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করছেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে বহিরাগত লোক নিয়ে এসে জোর করে ভোট কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এটি জনগণ মানবে না। আমরা এ অরাজকতা প্রতিহত করব।’

আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যাচাই-বাছাই করেই আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা-সক্ষমতা আছে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণ নৌকার প্রার্থীকেই ভোট দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছি না। বরং, বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল বাতেন নৌকার জোয়ার দেখে আমার সমর্থকদের ওপর বারবার হামলা চালাচ্ছেন, অফিস ভাঙচুর করছেন। নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে নৌকার প্রার্থী ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশল নিয়েছেন তিনি। মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’

আরেক প্রার্থী সাদিয়া আলম বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার বাবা বদিউল আলম বেড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আমি দীর্ঘদিন উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। জনগণের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।’

শামসুল হক টুকু বলেন, ‘জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনি নির্বাচিত হবেন। পরিবার যখন বড় হয়ে যায়, তখন আলাদা ইউনিট গড়ে ওঠে। তবে, মনে রাখতে হবে, নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মানে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।’

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে সাংসদ শামসুল হক টুকু বলেন, ‘এলাকায় ছিলাম কিছু দিন। আমি এখন ঢাকায় আছি। আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাবটা কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। বেড়া পৌরসভার বাইরে আমার সংসদীয় আসনে অনেক ভোটার-সমর্থক রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। তারা আমার বাড়িতে আসেন, কথা বলেন। এটা তো আর আচরণবিধি লংঘন হতে পারে না। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোনো কাজ করিনি।’

বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যখন যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে আইন মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইভিএম মেশিন এসে গেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হবে।’

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৮টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেওয়া হবে। এ পৌরসভায় মোট ভোটার ৪২ হাজার ৮১৮ জন।