সারা বাংলা

জমে উঠেছে নকলার ৯ ইউপি নির্বাচনের প্রচারণা

শেরপুরের নকলা উপজেলায় নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে শেষ সময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে ইউনিয়নের অলিগলি।

প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। মিছিল-মিটিং, পথসভা, উঠান বৈঠকে গণসংযোগ চলছে। ইউনিয়নের হাট-বাজার, চা স্টলে চলছে নির্বাচনি আলাপ-আলোচনা। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরাও রাত-দিন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। 

সবার আশা ভোট যুদ্ধে তারই জিত হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রার্থীকে নিরাশ করছেন না। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের আদর্শের বয়ানসহ ইউনিয়নে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন।

সরজমিনে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশায় মাইক বেঁধে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে।

উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নারী প্রার্থীদের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন স্বামী ও সন্তানরাও। তেমনি পুরুষ প্রার্থীদের পক্ষে স্ত্রী, সন্তানরাও বসে নেই। 

রহুল আমিন নামে এক ভোটার জানান, ভোট আসলে প্রার্থীদের আনাগোনার কমতি থাকে না। ভোট শেষ হলেই তাদের দেখা পাওয়া যায় না। প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে সেই মোতাবেক কাজ করে না বরং নির্বাচনের পর সব ভুলে যায় প্রার্থীরা। 

ভোটার বৃদ্ধ জমেলা বেগম বলেন, ‘অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন কিন্তু ইউনিয়নের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয় না। এবার আমরা সঠিক মানুষকেই ভোট দেবো।’

উপজেলার ২নং নকলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনিসুর রহমান সুজা বলেন, ‘সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ইউনিয়নের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করে আদর্শ ইউনিয়নে পরিণত করা হবে আমার মূল লক্ষ্য।’ 

৩নং উরফা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম তালুকদার ভূট্টো (চশমা প্রতীক), ৫নং বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের পরপর দুইবারের চেয়ারম্যান একইসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল আনোয়ার মহব্বত (আনারস প্রতীক) এবং ৭নং টালকি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর মহিউদ্দিন বুলবুলের (ঘোড়া প্রতীক) সঙ্গে কথা বলে জানা যায, তারা দীর্ঘ দিন স্বচ্ছতার সঙ্গে এলাকার এতিম, বিধবা, বয়স্কসহ সব কল শ্রেণিপেশার মানুষদের বিপদে-আপদে সাধ্যমত পাশে দাঁড়িয়েছি। এলাকাবাসীর দোয়া ও ভালোবাসা পুঁজি করে তারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

উপজেলার ৫নং বানেশ্বর্দী ও ৬নং পাঠাকাটা ইউপি থেকে এবারই মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম রুমি ও মো. আব্দুস ছালাম জানান, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তারা নির্বাচিত হতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইউনিয়নে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাজু সাইদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি দুই বার এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি বলেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবার নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে চন্দ্রকোনা ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে রুপান্তরিত করবো।’ 

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ইউনিয়নে মাঠে রয়েছেন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক কাজ করছে। তারা কেউ কেউ বলছেন দলীয় প্রার্থীর লোকজন প্রভাব খাটাতে গেলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হতাহত হবে, কারণ কেউ কাউকে ছাড় দিবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, নির্বাচন হবে শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।

নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহিম জানান, নকলায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে এবং ভোট সুষ্ঠু করতে যা করতে হবে, তাই করা হবে। 

নকলা উপজেলায় ৮২টি কেন্দ্রে ৩৫৪টি বুথে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জন ভোট দেবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭০ হাজার ৫৬৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ৬৮ হাজার ৩৮৩ জন।