সারা বাংলা

মুক্তিযোদ্ধা পল্লীতে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের

খাবার পানির তীব্র সংকট, খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বরগুনার মুক্তিযোদ্ধা পল্লীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস‌্যরা।

পল্লীতে ঢুকলেই দেখা যায়- অকেজো নলকূপ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ হয়ে গেছে। মশার উৎপাত, ভাঙা রাস্তা। বেড়িবাঁধ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জাতির বীর সন্তানদের এ পল্লী। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার প্রতিকার চেয়েও কোনো সুফল পায়নি মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দেওয়া তথ্য মতে, বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা গ্রামে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা পল্লীর উদ্বোধন করেন তৎকালীন খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। পুনর্বাসন করা হয় ৩৪টি যুদ্ধাহত ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে। যেখানে সুপেয় পানির জন্য বসানো হয় ছয়টি গভীর নলকূপ। বাসিন্দাদের সুবিধার্থে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়।

২০ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে পুরো পল্লীর চিত্র। এক সময়ের আনন্দের পল্লী এখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুর্ভোগের নাম। মেরামত না করায় অকেজো হয়ে গেছে ছয়টি নলকূপই। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ নির্মাণ করায় ময়লা-আবর্জনার নিচে চাপা পড়েছে ড্রেনটি। নেই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। ময়লা পানি জমে জন্ম নিচ্ছে মশা।

 

এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় এই পল্লীর সব ঘড়বাড়ি। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে চরম সমস‌্যার সম্মুখীন হতে হয় বাসিন্দাদের। সমস্যার যেন শেষ নেই এই পল্লীতে।

পল্লীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আ. খালেক (৭৬) রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নামে মাত্র মুক্তিযোদ্ধা পল্লী এটি। এখানে বসবাস করার থেকে নদীতে ভেসে যাওয়াও ভালো। মনে হচ্ছে কোনো অপরাধের শাস্তি ভোগ করছি। রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেয়। আর আমরা একটি নলকূপ পাই না, বেঁড়িবাধ পাই না। একটি ড্রেন পাই না। এমনকি একটা ইটের রাস্তাও পাই না। মশার জ্বালায় অস্থির আমাদের জীবন। দেশ স্বাধীন করেছি, পাকিস্তানিরা লুট করে বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ঠাঁই হয়েছে এই পল্লীতে। আর এখন এখানে অবহেলিত হয়ে পড়ে আছি।’

মুক্তিযোদ্ধা সুশিল মন্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাই সরকারের দেওয়া এই পল্লীতে বসবাস করছি। আমরা অসহায়, নয়তো সামর্থ থাকলে চলে যেতাম এই পল্লী থেকে। প্রতিবার জোয়ারে পুরো পল্লী প্লাবিত হয়। গোসলের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। খাবার পানি আনতে যেতে হয় পল্লীর বাইরে। এতে বিভিন্ন জনের নানা কটু শুনতে হয়।’

একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘পল্লী উদ্বোধন হওয়ার পর মাঝে মাঝে প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন এখানে আসতো আর ছবি তুলে চলে যেতো। এখন আর কেউ আসে না।’ 

তারা আরও বলেন, ‘অন্তত দুটি নলকূপ স্থাপন করে দিলেও পানির সমস্যা শেষ হতো। ছোটো এসব সমস্যার সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে এখন সবাই ক্লান্ত। এখন চরম ভোগান্তিময় জীবন যাপনই আমাদের কপালে রয়েছে।’ 

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা জানান, বেশিরভাগ ঘরের টিন নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ঘরে বসবাস করা খুবই কষ্টকর। যারা স্বচ্ছল তারা অনেকেই এই পল্লী ছেড়ে চলে গেছে। 

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. হারুন-অর-রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে। শিগগিরই সব সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।’