সারা বাংলা

ডিসেম্বর এলেই আবেগতাড়িত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু। এ মাসটি এলেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মনে জাগ্রত হয় এক ভিন্ন উন্মাদনা। কারণ একাত্তর সালের ডিসেম্বরে দেশ এ সময়ে চূড়ান্ত জয়ের পথে।

একাত্তর সালের ডিসেম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই আবেগে ভাসলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা।

বললেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে  ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। এ যুদ্ধে আমাদের লাখো ভাই শহীদ হয়েছেন। আর অসংখ্য মা-বোনদের দিতে হয়েছে ইজ্জত। এসব কথা মনে হলে আর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বেঁচে আর লাভ কি? আর কদিন বা বাঁচব? বেঁচে থাকতে চাই না। কিসের জন্য বাঁচব। যে আশা নিয়ে দেশ স্বাধীনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে পাক সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সে লক্ষ্য কী পূরণ হয়েছে? 

এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তারপরও আমি আশাবাদী। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন একদিন সফল হবে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগোচ্ছে। দেশ এগোতে দেখলে মনে আনন্দ পাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা কাজীবাড়ির বাসিন্দা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর স্নেহভাজন।

কাজী গোলাম মর্তুজা বর্তমানে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ওয়ার্কশপ এলাকায়  স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। 

আলাপকালে মর্তুজা জানান, দেশকে ভালবাসেন বলেই  ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ’৭১ সালের এপ্রিল মাসে ছাত্রনেতা দেওয়ান মাহবুবুল হকের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ে মা ও বড় ভাইয়ের অনুমতি ছাড়াই মৌলভীবাজার মহকুমার পিটি স্কুলের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যান তিনি। সেখানে আনসার, ইপিআর আর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎ পেয়ে আরো গর্বিত হন। তাদের সহযোগিতায় তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষক ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েক আলাউদ্দিন আহমেদ। প্রশিক্ষণের পর আনসার, মুজাহিদ, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দল গঠন করে শেরপুর নামক স্থানে পাক হানাদারদের মোকাবিলায় অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

পরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই এলাকায় ২২ এমএফ কোম্পানিতে যোগদান করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এতে তার বিশাল ভূমিকা ছিল। ১৯৭২ সালের ১৮  ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন হয়। সেই বেঙ্গলের সদস্য ছিলেন তিনি। সেনাবাহিনীর বিআরলি (নাইন) কোর্সে কুমিল্লার ব্রিগেডে তাকে পাঠানো হলে তিনি তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের মধ্য নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে তাকে অবসর দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সালের ৫ অক্টোবর এমএজি ওসমানী প্রতিষ্ঠিত জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক।

তিনি বলেন, আতাউল গণি ওসমানীকে আমি প্রাণের চেয়ে ভালবাসতাম। তিনিও আমাকে মায়া করতেন। আমি তার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম। ধন-সম্পদের চিন্তা করিনি। আর করলে এখন এভাবে থাকতে হতো না।