সাভার উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান চার্জশিটভুক্ত আসামি পারভেজ দেওয়ান আসন্ন পথালিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী ও নিহতের পরিবারের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের তথ্য সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সাক্ষরিত এক বার্তায় প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
আগামী ৫ জানুয়ারি সাভার উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পরিষদে পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৪ ডিসেম্বর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ উপজেলার আশুলিয়া থানার নয়ারহাট বাজারে তৎকালীন পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার শফিউল আলম সোহাগসহ ১৫ জন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। পরে নিহতের ভাই সুমন পন্ডিত চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের নামে মামলা করেন। পরে পুলিশ চেয়ারম্যানসহ ছয় মূল আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তবে অধিকতর তদন্তের পরে চেয়ারম্যানসহ সব আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের সঙ্গে আব্দুর রহিমের দ্বন্দ্ব হয়। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করে আসামিরা।
জানতে চাইলে নিহতের ভাই সুমন পন্ডিত বলেন, ‘আমার ভাই পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে তিনি প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে সমর্থন করেন। নির্বাচন জয়ের কয়েক মাস পরই চেয়ারম্যানের লোকজন প্রকাশ্যে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে পুলিশ চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্ত হন। এরপর রহস্যজনকভাবে পুলিশ আমার সাক্ষর ছাড়াই গোপনে প্রধান আসামি চেয়ারম্যানসহ ৬ আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়। পরে আদালতে আপত্তি জানালে সিআইডি দেড় মাস তদন্ত করে চেয়ারম্যানসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়।
এদিকে পারভেজ দেওয়ান মনোনয়ন পাওয়ার খবরে ক্ষোভ জানিয়েছেন পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘পারভেজ দেওয়ান হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তাকে কিভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই । তবে আমরা তৃণমূল পরিবর্তন চেয়েছিলাম, আমাদের চাওয়ার মূল্যায়ন করা হয়নি।’
পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় থানা থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। পরে সিআইডি আতাত করে একমাসের মধ্যে তদন্ত না করে আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে। প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছে। এছাড়াও অনেক খোঁজ খবর নিয়ে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, 'হত্যা মামলার আসামির বিষয়টা হয়তো মনোনয়ন বোর্ডের নজরে আসে নাই। বিষয়টি হয়তো তাদের জানাও নেই। যদি কেউ বলতো তাহলে হয়তো কেন্দ্রে আমরা বিষয়টা জানাতে পারতাম।'
দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়নে কাজ করছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। পরে অনুমোদন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যদের কোন ভূমিকা নাই। এটা পার্লামেন্টারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার কোনো কমেন্ট না করাই ভালো। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে। ওনারা যাচাই বাছাই শেষেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’