সারা বাংলা

মাগুরার মাঠে মাঠে কৃষকের আহাজারি

তিন দিনের টানা বর্ষণে মাগুরায় আমন ধান, শীতকালীন সবজি ও রবিশস্যের  ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে তিন দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে মাগুরা সদর,মহম্মদপুর,শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলায় আমন ধান, সবজি ও রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণে রোপণ করা বীজ ও ফসলে পচন ধরেছে। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতির বিষয়টি জানা গেছে।

কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতির ভয়াবহতার কথা জানা গেছে। মাঠে মাঠে দেখা যাচ্ছে কৃষকের আহাজারি। ফসল হারিয়ে তারা দিশেহারা। কীভাবে আবার চাষবাস করবেন, কোথায় টাকা পাবেন, চোখে অন্ধকার দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে ৪ ডিসেম্বর থেকে টানা তিন দিন ধরে মাগুরা জেলায় বৃষ্টি হয়। এর ফলে কয়েকদিন আগেও যেসব মাঠে সবুজ ফসল বাতাসে দোল খেতো- সেখানে এখন পানি আর পানি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ৬১ হাজার লাখ ৪১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছিল। বোরো ধানের বীজতলা, শীতকালীন সবজি ও  রবিশস্যের  আবাদ শুরু হয়েছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে ২৬ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমন ধান, শীতকালীন সবজি ও রবি ফসলের মধ্যে মসুরসহ বিভিন্ন ডাজাতীয় ফসল ও তেলবীজ  আলুর ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মহম্মদপুর  উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আমন খেতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। অনেক কৃষক তাদের ফসল বাঁচাতে ক্ষেত থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন।

জাকির শিকদার  জানান, ধান পাকা শেষ। অর্ধেক ধান কাটা শেষ।  কিন্তু টানা বৃষ্টিতে তাঁদের খেতের বাকি আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এখনো ফসলের ক্ষেতের অনেক স্থানে পানি জমে রয়েছে।

সদর উপজেলার ইছাখাদা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমনের ক্ষেতে পাকা, আধা পাকা ধানগাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে আছে। খেতে পানি জমে রয়েছে। অনেক কৃষক ধান কেটে ক্ষেতে শুকানোর জন্য রেখে দিয়েছিলেন। আমাদের সব ধান বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।

কৃষক অলিয়ার খাঁন  বলেন, ‘আমাগো কোমর ভাঙ্গে দিয়ে গেছে অসময়ের বৃষ্টি। সারা বছর এই ফসলটার আশায় থাকি। কিন্তু সব শেষ।’

শালিখার আড়পাড়ার কৃষক রতন বিশ্বাস বলেন, ‘ধান কেটে আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা ও মসুর ডাল বুনেছিলাম। এখন সেখানে হাঁটু পানি। সব মিলে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। সব শেষ হয়ে গেছে।’

শ্রীপুরের লাঙ্গলবাধের কৃষক কামরুল মোল্যা বলেন, ‘শীতের সবজি আবাদ করেছিলেন দেড় বিঘা জমিতে। বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় লাল শাক, পালন শাক, মুলা, গাজর ও পাতাকপিতে পচন ধরেছে।’

মহম্মদপুর  উপজেলার সদরের কবির হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির  ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। এটা সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ হবে। বাকিটা সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু খেতের সব ধানগাছ এখন বিধ্বস্ত।

মাগুরা কৃষি অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমবে। এরপর ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা তারা এখনো পাননি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।