সারা বাংলা

কুমারখালী-যদুবয়রা সেতু নির্মাণ শেষ হবে কবে

পদ্মার শাখা নদী গড়াইয়ের উপর নির্মিত হচ্ছে কুমারখালী-যদুবয়রা সেতু। ২৫ অক্টোবর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সিডিউল থাকলেও যথাসময়ে শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। 

করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় ছিল শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যে পরিণত হয়। যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে কুমারখালী উপজেলার দক্ষিণের পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর স্বপ্ন দেখে আসছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে সরকার এই সেতু নির্মাণে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

পথচারী ও এলাকাবাসী বলছেন, ঠিকাদার কোম্পানিরা সাধারণত কাজে তো গাফিলতি করেই যায়। ধীরগতিতে কাজ করছে, তবে এলজিইডি'র দায়িত্ব সেটা দেখাশোনা করার ।

তারা বলছেন, করোনার দোহাই দিয়ে তারা নানা সুবিধা নেওয়ার জন্যই কাজে এমন ধীরগতি। অন্যদিকে ব্রিজের কাজ দেখতে এলজিইডির লোকজন আসেন না, আর মাঝে মাঝে আসলেও ঘুরে চলে যান। তাদের তদারকি করতে দেখা যায় না।

অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই বেশ কয়েকবার সেতুর রাস্তার জমি নির্ধারণ, জমির মূল্য নির্ধারণের জন্য এলজিইডির কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিঠি দিলেও তার গুরুত্বই দেয়নি কুমারখালী উপজেলা এলজিইডি অফিস।

শহরের খেয়া ঘাটে নির্মিত ৬৫০ মিটার দীর্ঘ স্বপ্নের এই সেতুটি হচ্ছে ১১২টি পাইলের উপর।  দুই পাড়ে মোট ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য এপ্রোচ সড়ক ও নদী শাসনে প্রটেকটিভ ওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে সাড়ে তিনশ মিটার।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ করছে। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই সবগুলো স্প্যানের কাজ শেষ করেছে। ৫২টি পিসি গার্ডারের সেতুতে স্প্যান রয়েছে ১৩টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ৫০ মিটার, চওড়া হবে ৯.৮০ মিটার, সেতুর দক্ষিণের যদুবয়রা পাড়ের গার্ডারের ১৬টি এবং উত্তর পাড়ের ৭ টির ঢালাইও শেষ হয়েছে। ১৩টি স্প্যানের ৪টির ছাদ ঢালাইও হয়েছে। বর্তমানে নদীর তলদেশে পানি থাকলেও দুই পাশের অধিকাংশ স্প্যান বালুর চরে আটকে আছে। সেতুর উপরিভাগের কাজ পুরোদমে চলছে বলে প্রকৌশলী শরীফ হোসেন জানিয়েছেন।  

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই মূল সেতুর প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী আশিক আহমেদ জানিয়েছেন, এখন মূল গার্ডারের উপরে ডেস্ক স্লাব, রেলিং ও গার্ডারের কাজ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। আরো এক বছর কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ধীরগতির বিষয়ে কথা হলে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা জানান, এলজিইডি সব সময় তদারকি করছে। করোনার কারণে শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আমরা ১ বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি, আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এছাড়াও জমি কেনা, মূল্য নির্ধারণসহ কয়েকটি কাজের কাগজপত্র ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠনো হয়েছে ।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, আমি সব সময় কজের তদারকি করেছি। করোনা জটিলতা, শ্রমিক সমস্যার কারণে শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ হয়নি। অর্থের কোন সঙ্কট নেই। আশা করছি আগামী জুন-জুলাইতে কাজ শেষ হবে। সেতুর নামকরণের বিষয়েও তিনি বলেন, জনগণ চাচ্ছে শহীদ গোলাম কিবরিয়ার নামেই হোক, আমিও জনগণের সঙ্গে নামকরণে একমত।

প্রসঙ্গত, গড়াই নদীর উপর নির্মাণাধীন চতুর্থ এই সড়ক সেতুর নাম সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ গোলাম কিবরিয়া করার দাবী উঠেছে শুরু থেকেই। প্রকল্পে সেতুর নাম দেওয়া আছে ‘কুমারখালী লালন বাজার হইতে বাঁশগ্রাম জিসি ভায়া পান্টি রাস্তার ৩০০ মিটার চেইনেজে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ‘।

কুমারখালীবাসীর বহু প্রত্যাশিত এই টোল ফ্রি সেতু নির্মাণ হলে উপজেলার সঙ্গে ঝিনাইদহ ও মাগুরার দূরত্ব এবং গড়াই নদী দ্বারা বিভক্ত দক্ষিণের পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমবে। শিল্প শহর কুমারখালীর অর্থনৈতিক গতি পাবে।