সারা বাংলা

কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ‘চাহিদা ডটকম’

গাজীপুরের শ্রীপুরে চাহিদা ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক টাকা ফেরত চাইলে ৯৬ জন গ্রাহককে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার চেক দেন চাহিদা ডটকমের মালিক শামীম হোসেন। তবে হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ওই চেকটি ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়।

এ ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগ এনে ৯৬ জন গ্রাহকের পক্ষে গত ৩০ নভেম্বর গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আলমগীর হোসেন (৪০) নামে এক ভুক্তভোগী। এছাড়াও তিনি শ্রীপুর থানাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে। অভিযুক্ত মো. শামীম হোসেন (৩২) খুলনার পাইকগাছা থানার বেতবুনিয়া পূর্ব ভ্যাকটমারী পতন গ্রামের মো. রাশেদ আলী সরদারের ছেলে। প্রায় ছয় মাস আগে তিনি শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের প্রশিকার মোড় এলাকার সাইজুদ্দিন বেপারীর বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে চাহিদা ডটকমের ব্যানারে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন।

ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বলেন, শামীম হোসেন তার মালিকানাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চাহিদা ডটকমে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেন। পরে আমাকে নানাভাবে ফুঁসলিয়ে প্রায় ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন শামীম। আমার মতো আরও দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি আমাকেসহ অন্যান্য গ্রাহকদের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে কাউকে জেনারেল ম্যানেজার, টিম অর্গানাইজার, টিম লিডার, টিম কো-অর্ডিনেটর, টিম ম্যানেজার, চাহিদা অ্যাম্বাসেডর অথবা কাউকে প্রজেক্ট ডিরেক্টরসহ নানা ধরণের পদের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। একই সঙ্গে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। চাহিদা ডটকম শুধু মাওনাতেই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

তিনি আরও জানান, একসময় প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনিসহ ৯৫ জন গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকার জন্য চাপ দিলে গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাহিদা ডটকমের মাওনা অফিস থেকে অভিযুক্ত শামীম হোসেন ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক ইস্যু করেন। ১০ অক্টোবর চেকটি নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলে হিসাব নাম্বারে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেকটি ফেরত আসে। পরে তাদের খোঁজ করতে গেলে অফিসে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। 

বাড়ির মালিক সাইজউদ্দিন বেপারী বলেন, নিয়ম মেনেই ওই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্যেই অফিস তালাবন্ধ করে হঠাৎ করেই গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।

গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী জিএম রাব্বি বলেন, আলমগীর নামে এক গ্রাহককে দেওয়া চেকটি নগদায়ন করতে না পেরে অভিযুক্ত শামীমকে প্রথমে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। পরে এতে কোনও জবাব না আসায় গাজীপুর আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করা হয়। 

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি এখনও অবগত নন। তবে থানায় অভিযোগ দিয়ে থাকলে তদন্ত করে দেখবেন।