সারা বাংলা

জমি ও ঘর পাচ্ছেন আসপিয়া, চাকরি পেতে বাধা থাকছে না

বরিশালের হিজলা উপজেলায় খাস জমি ও সেখানে ঘর পাচ্ছেন পুলিশের প্রতিবদনে ‘ভূমিহীন’ আসপিয়া ইসলাম কাজল। এর ফলে তাকে পুলিশে চাকরি পেতে আর বাধা থাকছে না। 

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে কাজলকে জমি এবং ঘর দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ। 

বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশের প্রতিবদনে ‘ভূমিহীন’ আসপিয়া জমি ও ঘর পাবেন। আসপিয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি ও ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমি সকালে আসপিয়াকে আমার কার্যালয়ে ডেকে বিস্তারিত জেনেছি।’ এতে করে পুলিশে চাকরি হওয়া নিয়ে শঙ্কা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি। 

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তাকে নিয়ে খাস জমি দেখতে যাবো। জমি পছন্দ হলেই দ্রুত হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আসপিয়া নিয়োগের সময়সীমা কতদিন তা আমি জানি না। তবে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে সেই সময়সীমার মধ্যে তার বা তার মায়ের নামে জমি এবং ঘর হস্তান্তর করার চেষ্টা করা হবে।’

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভূমি না থাকায় কারও চাকরি না হওয়া দুঃখজনক। মেয়েটির পরিবারকে হিজলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে জমিসহ ঘর তথা স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।’  

পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের জন্য বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদরদপ্তর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আসপিয়া। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া। 

২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আসপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ আসপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আসপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন। 

এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরে আসে। এরপর তাকে জমি ও ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

উল্লেখ‌্য, বাবার মৃত্যুর পর আসপিয়া ইসলামের পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এর মধ্যেও কষ্ট করে গত বছর এইচএসসি পাস করেন আসপিয়া। স্বপ্ন ছিল পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা আনবেন। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করার পর পরীক্ষার সব কটি ধাপে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আসপিয়া।

চাকরির জন্য মনোনীত হওয়ায় আসপিয়ার পরিবারে খুশির জোয়ার বইছিল। কিন্তু হঠাৎই সেই খুশি ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, নিজেদের কোনো জমি না থাকায় চাকরিটা পাচ্ছেন না তিনি। এ খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন বরিশালের হিজলা উপজেলার আসপিয়া।