সারা বাংলা

১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী

মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সনের ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে মুন্সীগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ভোর রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গা ঢাকা দেয় পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররাও। 

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাসনের পর থেকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলায়ও গর্জে উঠেছিলো মুক্তিকামী জনতা। ২৯ মার্চ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শহীদ মিনারে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ঐ দিনই ছাত্র জনতা মুন্সীগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।

মুন্সীগঞ্জ জেলাটি ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের প্রতি পাক সেনাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিলো।

১৯৭১'এর পহেলা মে পাকিস্তানি সেনাদল ধলেশ্বরী নদী পার হয়ে জেলা শহর ও আব্দুল্লাহপুর লঞ্চঘাট দিয়ে প্রবেশ করে মুন্সীগঞ্জে। প্রবেশের পর হানাদার বাহিনী সরকারী হরগঙ্গা কলেজে তৈরি করে তাদের প্রধান ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে নির্যাতন-হত্যা চালাতো পাক সেনারা। হত্যা করে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের পূর্ব পাশে বধ্যভূমিতে ফেলে রাখতো। ওই ক্যাম্পে বসেই নীলনক্সার মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাক সেনারা। 

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধ যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী।

মুন্সীগঞ্জে প্রথমে ১৪ নভেম্বর টঙ্গীবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়। ১৫ নভেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লৌহজং। ১৭ নভেম্বর শ্রীনগর ও ২০ নভেম্বর সিরাজদিখান শত্রুমুক্ত হয়। 

৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে রতনপুর ও আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের তিনটি বড় দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের কারণে ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হরগঙ্গা কলেজ ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা।

একাত্তরে হানাদার বাহিনী মুন্সীগঞ্জে কাতারে কাতারে মানুষ হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, লেখক, সংবাদকর্মী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিত মানুষদের। একাত্তর সালের ৯ মাসে ৩৬৯ বর্গমাইল আয়তনের মুন্সীগঞ্জের ৪২টি স্থানে ১৪৫টি গণহত্যা সংঘটিত হয়।