সারা বাংলা

ফসলের মাঠে কৃষকের চোখে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, তাই কৃষক তার জমিতে ঘাস দিয়ে এঁকেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস। রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতার তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই তার এমন উদ্যোগ। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কৃষক রুমান আলী শাহ। ফসলি মাঠে তার দেশপ্রেমের এমন শিল্পকর্ম সবার মন ছুঁয়ে গেছে। তাই তো তার শিল্পকর্ম দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। 

দেশের প্রতি রুমানের এমন মমত্ববোধ এটিই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুজিববর্ষে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পালং ও লাল শাক দিয়ে তৈরি করেছিলেন শহীদ মিনার।  রুমানের প্রতিটি কাজেই রয়েছে ব‌্যতিক্রমীতার ছাপ। 

বিজয়ের ৫০ বছর, তাই ফসলি জমিতে সবুজ ঘাস দিয়ে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় পতাকার আকৃতি। মাঝে রক্তিম অবোয়ব।  উপরে লেখা মহান বিজয় দিবস। নীচে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কুলিয়ারচর উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের কৃষক রুমান আলী শাহ তার ৬ শতাংশ কৃষি জমিতে এঁকেছেন বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের প্রতিকী অনুষঙ্গ। 

শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে দেশে এসে নিজের জমিতেই গড়ে তোলেন ‘মিশ্র বহুমুখী খামার বাড়ি’। মিশ্র খামার বাড়িতে প্রতিটি প্রকল্প সাজানো হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্ল্যাকার্ড দিয়ে। 

মাটিবিহীন ঘাস উৎপাদনের প্রকল্পে লেখা ‘মাটি বিহীন ঘাসের চাষ করুন, সুস্থ সবল খামার গড়ুন’। দেশি মুরগির খামারের লিখে রেখেছেন ‘দেশি মুরগির যত্ন নিন, আসবে টাকা হবে না ঋণ’। কবুতরের খামারে লিখেছেন ‘কবুতরের যত্ন নিলে, ৩০ দিন পরপর বাচ্চা মিলে’।  গাভীর খামারে লেখা ‘গাভী ছাড়া উপায় নাই, দুধের বিকল্প কিছু নাই’।  এছাড়াও এক একর জমির উপর করেছেন পেয়ারা বাগান। ফরমালিনমুক্ত দেশীয় পদ্ধতিতে চাষ করা সেই পেয়ারাও বিক্রি হয় দেশের বাইরে।

রুমানের শিল্পকর্ম দেখতে নরসিংদী থেকে এসেছেন মো. আব্দুল কাইয়ুম।  তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুমান ভাইয়ের এই শিল্পকর্মের ছবি দেখে খুব ভাল লাগে। তারপর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে চলে আসলাম। ছবি আর বাস্তব কত পার্থক‌্য কাছে এসেই বুঝলাম। ফসলি জমিতে এমন শৈল্পিক কর্ম খুব সহজ কথা নয়। একমাত্র দেশের প্রতি ভালবাসা থাকলেই এমন কাজ করা সম্ভব।’

রুমান বলেন, ‘আগামীতে এক একর জমিতে পুরো বাংলাদেশের চিত্র ফুটিয়ে তোলার পরিকল্পনার রয়েছে। আমি চাই আমার এই শিল্পকর্ম সারাবিশ্বের মানুষ দেখুক। আমি আমার দেশকে অনেক ভালবাসি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মনপ্রাণ দিয়ে ফসলি জমিতে এসব করেছি। আমার খুব ভাললাগে যখন আমার কাজ দেখতে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। প্রতিদিন শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক মানুষ এখানে আসেন। আমি নতুন প্রজন্মের কাছে দেশকে ভালবাসার কথা বলে যেতে চাই।’

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘রুমান বানিজ্যিক কৃষির পাশাপাশি একজন প্রগতিশীল কৃষক। তার এমন সৃজনশীল শিল্পকর্ম কৃষি বিভাগের গর্ব। আমাদের কৃষি বিভাগ সবসময় তার পাশে থাকবে। এছাড়া বাণিজ‌্যিক এবং উদ‌্যোগী কৃষক হিসেবে আমরা তাকে পুরস্কৃত করারও উদ‌্যোগ গ্রহণ করব। সরকার বাণিজ‌্যিক কৃষক তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। আশাকরি তাকে দেখে আশেপাশের আরও শিক্ষিত বাণিজ‌্যিক কৃষক তৈরি হবে।’