সারা বাংলা

লঞ্চে আগুন: দগ্ধ ৭২ জন শেবাচিমে ভর্তি 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চের আগুনে দগ্ধ ৭২ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের কান্না আর আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল প্রঙ্গন। চিকিৎসকদের দাবি, দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ রোগীর শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে গেছে। 

এদিকে শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ পুড়ে যাওয়া তিন শিশুসহ ৫ জনকে ঢাকা বার্ণ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ আরো কয়েকজন রোগীর জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ এতথ্য জানান। 

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জরুরি বিভাগে সব রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ, স্যালাইন, অক্সিজেন, বালিশ, বিছানা, কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া ব্লাড ডোনেশন ক্লাবগুলোকে রক্ত সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে।’   তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বার্ণ ইউনিট বন্ধ রয়েছে। তবে সার্জারি ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭২ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জনের অবস্থা গুরুত্বর। তবে এখন পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টা) কেউ মারা যায়নি। শরীরের ৭০ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা তিন শিশুসহ ৫ জনকে ঢাকা বার্ণ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন মেডিক্যাল কলেজটির সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফেরদাউস আহম্মেদ ও শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৈহিদুল ইসলাম।’

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফেরদাউস আহম্মেদ বলেন, ‘লঞ্চে আগুনের ঘটনায় অধিকাংশ যাত্রীর শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর দুই রোগীকে ঢাকা বার্ণ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া অশংকাজনক অবস্থায় রয়েছেন আরো কয়েকজন রোগী।’ 

শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৈহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৭টি শিশুকে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। ৩ জনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। রেফার্ড করা তিন শিশু হল তাইফা, তামিম ও মাহিনুর। ওদের প্রত্যেকের বয়স ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে।

এর আগে শুক্রবার ভোর ৫ টার পর থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লঞ্চ দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের আনা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৭২ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডের ৩ ও ৪ নম্বর ইউনিটে ৪০ জন, মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডে ২০ জন, শিশু সার্জারী ওয়ার্ডে ৭ জন এবং অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে ৫ জন ভর্তি আছেন। 

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য যাত্রী। এছাড়া অগ্মিদগ্ধ হয়ে ঝালকাঠী ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার্ধীন আছেন শতাধিক রোগী।