সারা বাংলা

বিলীন হচ্ছে দক্ষিণের গোলবাগান, কমেছে গুড়ের উৎপাদন 

আকারে লম্বা ও পাতা সরু হলেও নাম গোলগাছ। আবার এ গাছের শিকড় লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হলেও এর ডগা পরিপূর্ণ সুমিষ্ট রসে। এমনই বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য ধারণ করে উপকূলীয় এলাকায় জন্ম নেওয়া গোল গাছ। কিন্তু বর্তমানে ক্রমশই বিলীন হয়ে যাচ্ছে গোলগাছ। পাওয়া যাচ্ছেনা গোল গাছের ডগা কেটে সংগ্রহ করা রস থেকে তৈরি গুড়। একই সঙ্গে বাজারেও মিলছে না গুড়ের কাঙ্খিত মূল্য।

এতে বিপাকে পরেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গোল গাছ পরিচর্যাকারী চাষিরা। ফলে এই পেশায় জড়িত অনেকেই এখন নতুন পেশায় যোগ দিতে শুরু করেছেন।গোল গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও সেই রসের তৈরি গুড়কে বাঁচিয়ে রাখতে তাই সরকারিভাবে আন্ধারমানিক নদীর তীরে গোলগাছের বনায়নের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ, ধুলাস্বার এবং মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে আবাদি জমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোল বাগান। এই গোল গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এসব এলাকার ২০০ পরিবার। 

প্রতিদিন বিকেলে গাছের ডগা কেটে হাড়ি পাতেন চাষিরা। রাতভর রস সংগ্রহ করেন তারা। সূর্যদয়ের পরে পাতালে জাল দিয়ে তৈরী করা হয় গুড়। ১০ লিটার রসে তৈরী হয় এক কেজি গুড়। আর এসব গুড় বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। 

ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ গুড়ের কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেনা বলে দাবি গুড় তৈরি কারকদের। এছাড়া অনেক জমিতে লবন পানি প্রবেশ না করায় মরে যাচ্ছে গোলগাছ। ফলে বর্তমানে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী গোলবাগান। তাই নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের আন্ধারমানিক নদীর তীরে গোলের চারা রোপন করে চাষিদের তত্ত্বাবধায়েনে দেওয়ার দাবি তাদের। দক্ষিণাঞ্চলের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশাও সবার।

নবীপুর গ্রামের লিপি মিত্র বলেন, ‘নীলগঞ্জ ইউনিয়নে যেসব স্থানে গোলগাছ আছে সেখানে এখন লবন পানি প্রবেশ করেনা। তাই অনেক স্থানেরই গোলগাছ মরে যাচ্ছে। আগে আমরা গোল গাছের ডগা কেটে ৫০ থেকে ৬০ কেজি রস পেতাম। এখন ২০ থেকে ২৫ কেজি রস পাচ্ছি।’

অপর ব্যক্তি সজল মিয়া বলেন, ‘এখন আর আগের মতো রস পাচ্ছিনা।  আন্ধারমানিক নদীর চরে সরকার যদি গোল গাছের চারা রোপন করে তাহলে আমারা গাছগুলোকে দেখে শুনে বড় করতে পারবো। এতে আমরা রস থেকে গুড় বানাতে পারবো। একই সঙ্গে নিজেদের অর্থনীতিকেও সচল রাখতে পারবো।’

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআরএম সাইফুল্লাহ জানান, ‘গোল গাছের রস থেকে গুড়ের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তাই কৃষি বিভাগকে লবনাক্ত এলাকায় গোলচারা রোপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। গুড়ের দাম ঠিক রাখাসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।’

পটুয়াখালী জেলা কৃষি অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদীর তীরে গোলচারা রোপনের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।'