সারা বাংলা

এবার আগাম আলু চাষে লোকসানে চাষিরা

গত বছর অধিক আলু উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবছরও লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ঝুঁকেছিলো ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা। কিন্তু আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানে পড়েছেন তারা। 

গত বছর তারা প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫-২৮ টাকা দরে। এবারে তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের ফারাক মিলাতে লোকসানের অংক গুনতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আলু চাষিদের।

জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক রবীন রায় বলেন, গতবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে এবারেও তেমনি আলু উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সামান্য ক্ষতি হয়েছে, তবে তা মানিয়ে নেওয়ার মতোই। কিন্তু গতবার আলুর দাম পেলেও এবারে আলুর দাম আমাদের কপালে হাত ঠেকিয়েছে। 

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের ভোপলা গ্রামের কৃষক মিঠুন বাবু বলেন, এবারের আলুর যা দাম তা হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।  বিঘায় আমাদের আলু উৎপাদন করতে খরচ হয় ২১-২২ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা আলুর দাম পাচ্ছি গড়ে ১৮-১৯ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমরা আলু চাষে লোকসানের মধ্যে আছি।

কৃষক হাবিবর রহমান বলেন-  সারের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ, সব মিলিয়ে যা খরচ তার চেয়ে আলুর অনেক কম দাম পাচ্ছি আমরা।  এবারে আলুর উৎপাদনে খরচ আর দামের ফারাক মিটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

সবজি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হাসান পাপন বলেন, বর্তমানে আলুর দাম বাজারে ১৫ থেকে ১৬ টাকা।  শীতকালীন সবজির লাগামহীন দাম ছিলো কিছুদিন আগেও। তখন আলুর চাহিদাও বেশি ছিলো। এখন শীতকালীন সবজির দাম মানুষের অনেকটা নাগালের মধ্যে এসেছে তাই আলুর চাহিদাও কমেছে। কারণ শীতকালীন সবজির দাম কম থাকলে মানুষ সবজিটাই বেশি খেয়ে থাকেন।

জেলার শাহী হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী আব্দুর রফিক বলেন,  গত বছর জেলায় অধিক আলু উৎপাদন হয়েছিলো। এ কারণে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগারের আলু বাজারে পেয়েছি। ফলে নতুন আলুর চাহিদার উপর প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে নতুন আলুটা বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়না। এ কারণেও আলুর চাহিদা কম আর দামটাও কম।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, গত বছর জেলাতে ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লক্ষ ৪১ হাজার ২৯৭ মে.টন। এবারে জেলার ৫ টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৫৮ মে.টন। হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৪৫-৪৮ মন। যা গতবারের তুলনায় সমান বলা চলে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে চাষিরা প্রতি বিঘায় আলুর দাম পাচ্ছেন ১৮-১৯ হাজার টাকা।