সারা বাংলা

প্রেমের ফাঁদ: টাকা না দিলে নেওয়া হতো টর্চার সেলে

প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয়। তারপর যোগাযোগ থেকে প্রেম বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এরপর বাসায় নিমন্ত্রণ। বন্ধুত্ব বা প্রেম ভেবে যারাই নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাসায় গেছে, তারাই হয়েছে প্রতারণার শিকার। 

প্রেম প্রতারণার অভিনব ফাঁদে পড়ে অনেকে খুইয়েছে লাখ লাখ টাকা। আবার কাঙ্খিত পরিমাণ টাকা না পেলে কাউকে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। 

ভদ্রতার লেবাস ধরে রংপুর নগরের এক যুবদম্পতি দীর্ঘদিন ধরে এ কাণ্ড করে এসেছেন। সম্প্রতি একটি মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব-১৩) এর একটি দল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাহারুখ করিম অনিক (৩৪) ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তার (২৪)। এই দম্পতি রংপুর নগরের গ্রান্ড হোটেল মোড় সেনপাড়া রোড এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তার শাহরুখ করিম অনিক ২০১৬ সালে গঠিত রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ।

তিনি জানান, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি গ্রেপ্তারের অধিযাচনপত্রের ভিত্তিতে র‍্যাব-১৩ জানতে পারে ওই দম্পতিসহ তাদের একটি চক্র নগরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাকে কৌশলে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যেত। এরপর সেখানে অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। 

এছাড়া জিম্মি করে অর্থ আদায়, হত্যার ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

অধিযাচনপত্রটি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে জিম্মিকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। প্রাথমিকভাবে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর রোবববার (২ জানুয়ারি) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-১৩। এসময় নিজ বাসা থেকে শাহারুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মাহমুদ বশির আরও জানান, অভিযানের সময়ে ওই বাসার ৬ষ্ঠ তলায় একটি টর্চার সেলের সন্ধান মিলেছে। সেখানে প্রতারণার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিদের জিম্মি করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত অনিক-আসমানী দম্পতি। 

ওই টর্চার সেল থেকে দুটি চাপাতি, ইলেকট্রিক শকের তার, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি, হাতুড়ি, ছুরি, গ‌্যাস লাইট, প্লায়ার্স, রেঞ্জ, স্ক্রু ড্রাইভার, কাঁচি, স্ট্যাম্প, ভিডিও ধারনের দুটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ওই দম্পতি বিভিন্ন ব্যক্তিদের জিম্মি করে টাকা আদায় এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জন্য র‍্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানা হয়েছে।