পঞ্চম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী উপজেলার ২৪ ইউনিয়নে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
পৌষের শীত উপেক্ষা করে সকালে কুয়াশার মধ্যেই ভোট দিতে আসেন ভোটাররা। বেশ কিছু কেন্দ্রে রয়েছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ গহিরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ৭টা থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন। আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি।’
সকাল থেকে ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও দেখা গেছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
সকালে ভোট দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। আর নির্বাচন সূষ্ঠু হলে ইনশাআল্লাহ আমি বিজয়ী হবো।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এর আগে সকালে ভোর ৬টা থেকে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার, একাধিক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, একজন অস্ত্রসহ পুলিশ অফিসার, অস্ত্রসহ চারজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন আনসার, অস্ত্রসহ একজন এপিসি আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ভিডিপির আটজন পুরুষ ও সাতজন মহিলা সদস্যসহ ২২ জন করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি ইউনিয়নে দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স। টহলে রয়েছেন বিজিবির সদস্যরা।
তিন উপজেলার ২৪ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করবেন।
বোয়ালখালী উপজেলায় পাঁচ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন, জিসান বিন মাজেদ, মামনুন আহমেদ অনিক, মো. রাজীব হোসেন, আবু রায়হান, এসএমএন জামিউল হিকমা।
আনোয়ারা উপজেলায় হিমাদ্রী খীসা, রাজিব চৌধুরী, শিরিণ আক্তার, মোহাম্মদ আল আমিন সরকার, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও সুবল চাকমা এই ছয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন।
চন্দনাইশ উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান, নাইমা ইসলাম, মিল্টন বিশ্বাস, সজীব কান্তি রুদ্র, আশরাফুল আলম, মো. মাসুদ রানা দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশের ২৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২২০টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১২৭টি বুথে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে তিন উপজেলার ২৪ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮ হাজার ২৮৩ জন।
আনোয়ারা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে। সেগুলো হলো— বৈরাগ, বারশত, রায়পুর, বটতলী, বরুমছড়া, বারখাইন, আনোয়ারা সদর, চাতরী, পরৈকোড়া ও হাইলধর। মামলার কারণে আনোয়ারার ১১ নং জুইদন্ডী ইউনিয়ন বাদ পড়েছে।
আনোয়ার উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫০ ভোটার। এতে নারী ভোটার ৯২ হাজার ৪৫৯ এবং পুরুষ ১ লাখ ২৯১ জন। এই উপজেলায় মোট কেন্দ্র ৯২টি।
বোয়ালখালী উপজেলার ৭ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেগুলো হলো— শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা ও চরণদ্বীপ। এতে মোট ভোটার ১ লাখ ১৫ হাজার ১৮ জন। এতে পুরুষ ভোটার ৬০ হাজার ২০ জন এবং নারী ৫৪ হাজার ৯৯৮ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৬৫টি।
চন্দনাইশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে। চন্দনাইশ উপজেলার ৮ ইউনিয়ন হলো— কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, বরকল, বরমা, বৈলতলী, হাসিমপুর, খোপাছড়ি ও সাতবাড়িয়া। এতে মোট ভোটার ৯৭ হাজার ৮১৫ জন। পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ৫১৫ এবং নারী ৪৬ হাজার ৩০০ জন। এ উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৬৩টি।
২৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশিরভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেশির ভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন ভোটাররা। সুষ্ঠু নির্বাচনের এতো প্রস্তুতির মাঝেও ভোটারদের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে।
এর আগে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি, আগের নির্বাচনগুলোর মতো এ নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।’
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত যারা: পঞ্চম ধাপে আনোয়ারা উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চার জন। বৈরাগ ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াব আলী, বটতলীতে এম এ মান্নান চৌধুরী, বারখাইনে হাসনাইন জলিল চৌধুরী শাকিল ও চাতরীতে নির্বাচিত হয়েছেন আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল। এছাড়া, চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন।