সারা বাংলা

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হরিপুর রাজবাড়ি 

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর রাজবাড়িটি। অনেকেই এখনো জমিদার জগেন্দ্র নারায়ণের এই বাড়িটি দেখতে আসেন। 

এটি নির্মিত হয় ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে। নির্মাণ কাজ শুরু করেন রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী আর সম্পন্ন করেন তারই পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। জমিদারের বাড়ি হলেও স্থানীয়ভাবে এটা রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই জমিদারের বাড়িটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সমাপ্তকৃত রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি আছে। তাছাড়া ভবনটির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে। রাজবাড়িতে ছিল একটি বড় পাঠাগার যার অস্তিত্ব এখন নেই। রাজবাড়িটির যে সিংহদরজা ছিল তাও এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 

বিভিন্ন মহল থেকে বার বার এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ ও সংস্কার করার দাবি জানানো হচ্ছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে শত শত বছর ধরে ময়লাস্তুপে পরিণত হয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি গত বছরেই নিজেদের উদ্যোগে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করেছিলো স্থানীয় কিছু শিশু-কিশোর ও যুবকরা। তাদের চাওয়া ছিলো- যে জমিদার বাড়িটি  উত্তরবঙ্গ সহ এ অঞ্চলের পরিচিতি বহন করে সেটিকে দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হোক। 

অভিযোগ উঠেছে- বাড়িটি সংরক্ষণ বা সংস্কার তো দূরের কথা বাড়ি সহ আশে পাশের বেশিরভাগ জমি দখল করে আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির দ্বিতীয় তলার কয়েকটি ঘর কবুতরের খামার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।  তার সাফ কথা, বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে তাই এটিকে ব্যবহার করছি। 

এছাড়া প্রায় ১০ বছর ধরে এই জমিদার বাড়িটিকে নিজস্ব ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন আরেকজন। তার কথা হচ্ছে- পরিত্যাক্ত এ রাজবাড়িটিতে ১০ বছর ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছি, কখনো অনুমতির কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়নি।  

হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, জমিদার বাড়িটিতে এক সময় সরকারি অনেক অফিস ছিলো। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই সেখানে দখল করে ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছে। কিন্তু এখন সময়ের দাবি জমিদার বাড়িটিকে সংরক্ষণ করা। আমি বিভিন্ন বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা রেখেছি। 

রাজশাহী থেকে আসা জাহানা বিনতে বুলবুল নামের এক দর্শনার্থী জানান, যত্নের অভাবে ভেঙে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি। ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখি কতগুলো পায়রা খাবার খাচ্ছে। জানতে পারি এখানে পায়রার খামার করা হয়েছে। 

হরিপুর মোসলিম উদ্দীন কলেজের সাবেক সহকারি অধ্যাপক করিমুল হক বলেন, এখানকার কিছু যুবক জমিদার বাড়িটির চারপাশে পর্যবেক্ষণ করে চিহ্নিত করেছিলো ঝুঁকিপূর্ণ দেয়াল, সিঁড়ি, পিলার, কাগজে লিখে সাঁটিয়েছিলো সাবধানতার বার্তা ও মনিষীদের জ্ঞানবাণী।  জমিদার বাড়িটি  সংস্কার ও সংরক্ষণের বিনিত আবেদন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছিলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে। বাড়ির চারপাশে ফুলের গাছও লাগিয়েছিলো। তাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলো উপজেলাবাসী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এখন দেখছি বাড়িটির চারপাশে দখলের মেলা বসেছে। অনেক দখলও হয়েছে। সেই সাথে মাদকসেবিদের নিরাপদ স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে বাড়িটি।

জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর কাহারোলের দায়িত্বরত  কান্তনগর প্রত্নতাত্বিক জাদুঘরের সহকারি কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। সেখানে এ মাসের শেষের দিকে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে আমার। যদি সেটি আমাদের সংরক্ষণের তালিকাভূক্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে।

হরিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করছি এবং যারা সেখানে অবৈধভাবে রয়েছে তাদের উচ্ছেদ করতে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।