সারা বাংলা

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর, ২ স্টাফ আটক 

খুলনায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মো. ইলিয়াস হোসেন ফকির (৩০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ হাসপাতালের দুই স্টাফকে আটক করেছে। 

রোববার (২৩ জানুয়ারি) রাতে মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়ের খানজাহান আলী হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। 

মারা যাওয়া ইলিয়াস হোসেন ফকির খুলনার দাকোপ উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ফকিরের ছেলে। তিনি নগরীর গল্লামারী রাইসা ক্লিনিকের পাশে কাঁচা মালের ব্যবসা করতেন বলে জানা গে‌ছে।

স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসার কারণেই ইলিয়াস হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। 

তার স্ত্রী পারভীন আরা বলেন, পাঁচ মাস আগে তার স্বামী ইলিয়াস ফকিরের হার্নিয়ার সমস্যা হয়। এ কারণে তিনি নগরীর মোহাম্মাদ নগরের ফার্মাসিস্ট মনিরের সাথে কথা বলেন। তিনি তাকে খানজাহান আলী হাসপাতালে অপারেশন করার জন্য পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর একটার দিকে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল চারটা ৫৫ মিনিটের দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোস্তফা কামাল, ডা. এস এম মোর্শেদ ও ইন্টার্ন ডা. মোহন রোগীকে অপারেশনের জন্য কক্ষে প্রবেশ করেন। ডা. রিয়াজুল শুভ তাকে অজ্ঞান করেন। কিছুক্ষণ পরে অস্ত্রপ্রচার সফল হয়েছে বলে চিকিৎসকরা তাদের জানান। এর কিছুক্ষণ পর আমরা অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি তার খিচুনী উঠেছে। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের লোকজন তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। 

আরেক স্বজন মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই হাসপাতালের পরিচালক ও অন্যান্য চিকিৎসকরা একে একে সটকে পড়তে থাকেন। অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ইলিয়াসকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসে। রাতে খানজাহান আলী হাসপাতালে গিয়ে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দেখতে পাওয়া যায়নি। অপারেশনের লাইট ও অক্সিজেন চলতে দেখা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ও একজন সেবিকাকে আটক করেছে। নিহত ইলিয়াস ফকিরের লাশ ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে পু‌লিশ।

এদিকে খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. আবু হানিফ জানান, ইলিয়াস ফকিরের মৃত্যুর পর আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালের দু’জন কর্মচারীকে আটকে রেখেছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে থানায় নেওয়া হয়েছে এবং এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপারেশন থিয়েটারের মধ্য থেকে আবু নাসের হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মোর্শেদের একটি নির্দেশনাপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। 

ইলিয়াসের বড় ভাই সোহরাব হোসেন বলেন, ইলিয়াসের তিন সন্তান। তাদের কি হবে? ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। দোষী চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ স্বজনদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালের দুই স্টাফকে আটক করা হয়েছে। 

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।