সারা বাংলা

পোষ মানাতে হাতি শাবককে নির্যাতন 

মাটিতে পুঁতে রাখা গাছের চারটি খণ্ড। সামনের দুই পা সামনের গাছের সঙ্গে এবং পেছনের দুই পা পেছনের গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। এর আগে গলায় রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। এসময় গগনবিদারী চিৎকার দিতে থাকে ৪ বছর বয়সী এই হাতি শাবক। সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে মুক্ত হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে।

পাহাড় থেকে গাছ টানা, সার্কাস, খেলা ও শারীরিক কসরত দেখানোর জন্য হাতিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হাতি বশে এনে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় প্রশিক্ষণের নামে করা হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে হাতির বাচ্চা ‘টাইগার’ নির্মমতার শিকার হয়। খবর পেয়ে পরের দিন ২৪ জানুয়ারি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নির্যাতন বন্ধ হলেও তারা চলে গেলে আবার শুরু হয়।

এদিকে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাতির বর্তমান দায়িত্বে থাকা জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুম রেজাকে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নির্যাতন ছাড়া স্বাভাবিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে হাতি শাবককে পোষ মানানো (স্থানীয় ভাষায় হাদানি) চলছে। উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কুচাইতল এলাকায় হাতির বাচ্চাকে বেঁধে পোষ মানানোর নামে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পোষ না মানা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন মাস এভাবেই চার পা রশি দিয়ে বেঁধে খুঁটিতে টানা দিয়ে রাখা হবে। সাত সদস্যের একটি দল এ প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করে। প্রশিক্ষণের সময় শারীরিক কসরত, গাছ টানানোসহ মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়তে দেওয়া হবে নানা তালিম। তবে এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সহজ নয়। হাতি শাবকের জন্য কঠিন ও কষ্টদায়ক।

প্রশিক্ষক আকবর আলী বলেন, ‘সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে ২/৩ লাখ টাকা খরচ হবে। হাতি প্রশিক্ষণের দৃশ্যটি দেখতে মানুষের জন্য আনন্দ দায়ক হলেও প্রক্রিয়াটি বাচ্চার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তবুও তাকে পোষ মানানোর এ কাজটি না করলে হাতিটি জংলী হাতির মতো আচরণ করবে। মানুষের জান-মালের ক্ষতি করবে।’

তিনি বলেন, ‘তিন মাস পরেও প্রশিক্ষণের আরও কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। তা সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এই হাতিকে দিয়ে যেকোনো কাজ করানো যাবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাচ্চাকে বিভিন্ন সংকেত বুঝিয়ে দেওয়া হয়, শিখিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন কাজের কৌশল। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই হাতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ। প্রশিক্ষিত হাতি দিয়েই গাছ টানা, পড়ে যাওয়া গাড়ি তোলা, অতিথিকে অভিবাদন জানানো, সার্কাসে খেলা দেখানোসহ বিভিন্ন কাজ করানো হয়।’

পরিবেশকর্মী রিপন দে বলেন, ‘মানুষের প্রয়োজনে হাতি ব্যবহার আধুনিক যুগে মানানসই নয়। হাতি দিয়ে যে কাজগুলো করা হয়, তার জন্য এখন অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। বিকল্প থাকার পরেও একটি প্রাণীকে এভাবে নির্যাতন করে পোষ মানানো তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে ব্যথিত করবে। সরকারের উচিত হাতি পালনের লাইসেন্স বাতিল করা। সব হাতিকে বনে ফিরিয়ে নেওয়া।’

এবিষয়ে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই এলাকায় কয়েকটি হাতি রয়েছে। যেগুলো পোষা। মালিকরা লাইসেন্স নিয়েই হাতি পোষেন। তারা হাতি বশে আনার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। তবে নির্যাতনের বিষয়টি দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘পোষা হাতিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার কিন্তু প্রশিক্ষণকালে তাকে নির্যাতন করা যাবে না। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক ও হাতির মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর হাতিশাবকের পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’