সারা বাংলা

বস ইজ অলওয়েজ রাইট!

তাপস রায়আপনার ‘বস’-এর সঙ্গে কীভাবে চলবেন, সেটাই বলার বিষয়। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, জন্ম নিয়েই কেউ বস হয়ে যান না, প্রতিষ্ঠান তাদেরকে বস হিসেবে তৈরি করে নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আজ যিনি আপনার বস, গতকাল তিনি ছিলেন অন্য কারো অধীনস্থ। তিনি যে সব সময় অন্যদের থেকে আলাদা ধরনের হবেন- এমন কোনো কথা নেই। এটা ধরে নেবেন যে, সাধারণ মানুষের যা কিছু দোষ-ত্রুটি সবই তার আছে। মানবিক গুণও তার থাকবে। তাই আর পাঁচজনের সঙ্গে যেভাবে চলেন, বসের সঙ্গেও সেরকমই স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন। বস যা বলবেন, তাতেই ‘হ্যাঁ’ বলবেন না কখনও। এভাবে ‘ইয়েস ম্যান’ হয়ে যাওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু তাই বলে উদ্ধত ভাবও দেখাবেন না। কারণ, বসকে যদিওবা সম্মান করতে না পারেন, তার চেয়ারকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, করপোরেট দুনিয়ায় ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করতে না পারলেও তার পদকে অসম্মান করা চলে না। কীভাবে ওঠা-বসা করলে বস প্রসন্ন থাকবেন, তা বুঝে নিন। তার কাজ করার ধরনটি জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। কেমনভাবে কাজ করলে তিনি খুশি হন, তা আপনাকে শিখে নিতে হবে। তবে অন্যভাবে খুশি করার চেষ্টা করবেন না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। বস যদি সারণি বা ছক অনুযায়ী সংখ্যা দেখতে পছন্দ করেন, তাহলে সেভাবেই সেগুলো দেখাবেন। সম্ভব হলে বস যেভাবে করেন, তার চেয়ে আরও ভালোভাবে সেগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। দেখা গেল, তিনি হয়তো দীর্ঘ বাক্য, বানান ভুল বা বাক্য গঠনের ভুল সহ্য করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কোনো রিপোর্ট বা চিঠি তার কাছে পেশ করার আগে যত্ন করে সেগুলো পড়ে নেবেন। এজন্য যদি আপনাকে আপ্রাণ পরিশ্রম করতে হয়, তাও ভালো। শেষ পর্যন্ত যে কাজ আপনি পেশ করবেন, তা যেন বসের পছন্দমাফিক হয়। বস যদি আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হন তাহলে আপনার জন্যই সুবিধা। সেক্ষেত্রে আপনার সমস্যা অপেক্ষাকৃত কম হবে। শুধু আপনাকে একটু বেশি নিখুঁত কাজ দেখাতে হবে। সতর্ক আর পরিশ্রমী হতে হবে। আপনার চেয়ে তার বুদ্ধির স্তর যদি কিছুটা নিচে হয় (অনেক ক্ষেত্রে এটাই হয়ে থাকে) তাহলে ধৈর্য ধরুন। তিনি যে আপনার চেয়ে কাজের দিক থেকে কম যোগ্য, সেটা বুঝতে দিয়ে তাকে হেয় করবেন না। মাথা খাটিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবেন, কাজকর্ম করবেন। প্রয়োজনে আপনি তার মুখ দিয়ে কিছু কিছু কথা বলিয়ে নেবেন। বসের হয়ে কিছু কাজও আপনাকে করে দিতে হবে। ঊর্ধ্বতনদের সামনে কখনও তাকে অস্বস্তিতে পড়তে দেবেন না। নীতিগত মতপার্থক্য ছাড়া সব সময়ই নিজেকে ভাববেন একধাপ নিচে। হাল ছাড়লে হবে না, ক্রমাগত বুঝিয়ে তাকে আপনার নিজের মতের অনুকুলে নিয়ে আসুন। যেসব ক্ষেত্রে আপনাদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে, এক সময় সেগুলো দূর হয়ে যাবে। বসকে প্রভাবিত করতে হলে চাই কৌশল- যখনই প্রয়োজন হবে, আপনার নিজের স্বার্থেই কৌশলগুলো প্রয়োগ করার উপায় জানতে হবে। একটি বিষয়ে আপনাকে সাবধান হতে হবে। বসের সুনজরে পড়ার জন্য আপনার কর্মদক্ষতা কিন্তু যথেষ্ট নাও হতে পারে। আপনার জ্ঞান কতটা, তার ওপরও এটা নির্ভর করবে না। নির্বোধ হলে আপনার যতটা ক্ষতি হতে পারে, এটাও একইরকমভাবে আপনার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। নিজের প্রখর বুদ্ধির পরিচয় হঠাৎ হঠাৎ দেবেন। বেশিরভাগ সময়ই বসকে মেনে নেবেন এবং সৎ থাকবেন। এতে আপনার নিষ্ঠার প্রতি তার আস্থা বাড়িয়ে তুলবে। যদি একান্তই সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার আপত্তির কথা বসকে সবিনয়ে জানাবেন। মনে রাখবেন, আপনি ‘কী’ বলছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি তা ‘কীভাবে’ বলছেন। কোনো বিষয়ে আপনার হয়তো মনে হয়েছে এমন দৃষ্টিভঙ্গিই ঠিক। কিন্তু আপনার বস তা নাও ভাবতে পারেন। তাই কখনও কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে জোর গলায় দাবি তুলবেন না। বসের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ধৈর্যই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ভুলে যাবেন না, আপনার সবকিছু দেখাশোনার দায়িত্ব এবং ক্ষমতা বসের রয়েছে। সুতরাং যাই করুন না কেন, তার সমর্থন আদায় করে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আর এজন্যই বসের সঙ্গে মানিয়ে চলে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলাটা আবশ্যক। এজন্য চাই সম্পর্ককে বুঝতে পারার ক্ষমতা। এটাও আপনাকে বুঝতে হবে যে, কর্মস্থলে ও তার বাইরে আপনার নিজেকে এবং আপনার বসকে কর্মকর্তা হিসেবে আলাদা ধরনের চাপের মুখোমুখি হতে হয়। আপনাদের দুজনেরই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আলাদা। আর সেই কারণেই ক্ষমতা, দায়িত্ব, আশা-আকাক্সক্ষা, দুর্বলতা সবই ভিন্ন ধরনের। আপনাদের পারস্পরিক নির্ভরতার ঠিক পরিসীমা কোথায়, সেটা বের করে নিতে হবে। তাহলে আপনার কাজও হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ। নিজের চিন্তাশক্তির সাহায্য নিন। বসকে নিজের অনুকুলে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আভিজাত্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করবেন। কোন কাজে বসের কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা  আন্দাজ করে নিতে হবে। বসকে আপনার গাফিলতির সুযোগ নিতে দেবেন না। কোনো ভুল হয়ে থাকলে আগেই জানিয়ে দিন বা দুঃখ প্রকাশ করুন। নীতিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার একচেটিয়া অধিকার কিন্তু আপনার বসের। কোনো সময়ে তিনি আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে বললে তাকে জানানোটা আপনার সৌজন্য। তা যদি না করেন, তাহলে সেটা হবে আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার মতো অস্ত্র তার হাতে তুলে দেয়ার শামিল। প্রয়োজনমতো বা ইচ্ছা করলেই তখন তিনি এক-একটি বাণ তার তূণ থেকে প্রয়োগ করবেন। তাই নিজেকে বাঁচাতে সময়মতো সব জানিয়ে দিন। সেটা অন্য কোনো কথা প্রসঙ্গেও তাকে জানিয়ে রাখতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বের মনোভাব বজায় রাখবেন। তাই বলে বেশি গায়ে পড়া ভাব দেখাবেন না। খোলাখুলি কথা বলবেন, তাই বলে সব কিছু বলবেন না। বসের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে নামার আগে সবদিক ভালো করে বিবেচনা করে দেখবেন। আপনার বসের দিক এবং তার বাইরে আর কে কী বলতে পারেন, সবই ভেবে নিতে হবে। খোলা মনে কিন্তু সতর্কভাবে এগোবেন। আপনার নিজস্ব বা ব্যক্তিগত বিষয়ে কখনই তাকে হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না। তাহলে হয়তো তিনি এগুলোকেও তার সুবিধামতো আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন। সুতরাং সাবধান আপনাকে হতেই হবে। মনে রাখতে হবে, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেই বসের আনুকূল্য নিতে হবে। তিনি সঠিক অথবা ভুল যাই হোন না কেন সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব অফিস আপনাকে দেয়নি। বস বললেই হাতের তালু ঘষতে ঘষতে কাজ করতে হবে এটা যেমন ঠিক নয়, তেমনি কেন ঠিক নয় এর যুক্তিসঙ্গত কারণও আপনার কাছে থাকতে হবে। তার সঙ্গে কাজ নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে কিন্তু সেটা যেন তর্কে না গড়ায়। তার দিকটিও দেখবেন, অফিস পলিসি, কর্মপরিবেশটাও দেখে নিতে হবে।

রাইজিংবিডি/শাহনেওয়াজ/৪ এপ্রিল, ১৪