সারা বাংলা

২২ বছর ধরে পরিবার খুঁজছেন নুর আলম  

নুর আলম (২৯)। সাত বছর বয়সে ২০০০ সালে কাঁদতে কাঁদতে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। পরিচিত ছিল না ওই গ্রামের কেউ। জানতেন না তার গন্তব্য। কোথা থেকে এসেছেন, কার সঙ্গে এসেছেন তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি। 

নুর আলমের মায়ায় পড়ে ওই গ্রামের এনজিও কর্মী আব্দুর রহমান মন্ডল ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম দম্পতি তাকে আশ্রয় দেন। পরবর্তী সময়ে মাইর্কিং ও লিফলেট বিতরণ করেও তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় লেখাপড়া করতে পারেননি। এদিকে ২ বছর আগে আব্দুর রহমান মন্ডল মারা যান। তবে আব্দুর রহমানের অন্য সন্তানের মতো বড় হচ্ছেন নুর আলম।

আব্দুর রহমানের ছেলে মাসুদ মিয়া বলেন, ‘নুর আলম ও আমি প্রায় সমবয়সী। ২২ বছর আগে আমাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে কান্না করতে করতে যাইতে ছিল। তবে কেউ তাকে চিনতো না। পরে আমার বাবা-মা তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরিচয় জানতে চাইলে তার বাবার নাম শাহ আলম, ভাই সম্রাট জুতার দোকান করে, বোন মুক্তা ও চাচার নাম সাহাবুদ্দিন ছাড়া তার পরিবার সম্পর্কে আর কিছুই বলতে পারে না। সে বাসে করে এই কাতুলী গ্রামে এসেছে বলে জানায়। তার গ্রামের নাম ‘হুইল্লা’ বললেও অনেক খুঁজেও সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ 

মাসুদ আরও বলেন, ‌‘আমার তিন বোন আর আমি একা। তবে নুর আলম আমাদের কাছে থাকতে থাকতে সে পরিবারের সদস্য হয়েছে। সবাই তাকে আমার মতোই আদর যত্ম করেন।’

কাতুলী গ্রামের আব্দুল বারেক বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত নুর আলম ওই বাড়িতে থাকে। তার ব্যবহার অনেক ভালো। কেউ কোনো কাজ দিলে সাথে সাথে করে দেয়।’

অপর জন হামিদ মিয়া বলেন, ‘এ বাড়িতে এসেও একবার নুর আলম হারিয়ে গিয়েছিল। নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরতে ঘুরতে যমুনায় চলে গিয়েছিল। সংবাদ পেয়ে মাসুদরা তাকে খুঁজে আনে। নুর আলমকে ছেলের মতো করেই বড় করেছে আব্দুর রহমান মন্ডল। এখনো ওই বাড়িতে তিনি খুব সুখে শান্তিতে আছে।’

মাসুদের বোন শিরিনা বেগম বলেন, ‘ছোট থেকে নুর আলমের সাথে একসঙ্গে বড় হয়েছি। খেলাধুলাও এক সাথে করেছি। আমরা ভাইবোনের মতোই এখনো চলি। ওকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখি। ওর জন্য আমাদের অনেক মায়া লাগে।’

মমতাজ বেগম বলেন, ‘প্রথমে শুনতাম এই গ্রামে ছোট এক ছেলে এসে ঘুরাফেরা করতো, না খেয়ে থাকতো। কিন্তু দেখিনি। হঠাৎ একদিন দেখি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে সে ঘুরছে। পরে আমার স্বামীকে আমাদের বাড়িতে আনতে বলি। তার ভরণপোষণের দায়িত্ব আমরাই নেই। আমারও সন্তান আছে এই ভেবে মায়া লাগার কারণেই তাকে লালনপালন করি। তার বাম চোখের উপরে কাটা দাগ আছে। আমি চাই তার আপনজন যদি থাকে আসুক, দেখুক ও জানা থাক তাদের সন্তান ভালো আছে।’

কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মাইকিং করে তার পরিবারের খোঁজ করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। আমরাও তাকে সহযোগিতা করছি, সে যেন তার পরিবারকে ফিরে পায়। সে স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাকে সহযোগিতা করা যায়নি। আমরা তার জন্ম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইব্রাহীম বলেন, ‘ওই ছেলের বিষয়ে আগে জানতাম না। এখন জানলাম। অফিসিয়ালি তার পাশে যতটুকু দাঁড়ানো যায়, আমরা চেষ্টা করবো তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’