সারা বাংলা

আমের বাগানে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা

আমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ইতোমধ্যে এখানকার প্রতিটি বাগানের গাছগুলোতে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিদের বাগান পরিচর্যার কাজ শুরু হয়ে গেছে। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার আম গাছের পরিচর্যায় বেশি মনযোগী হয়েছেন বাগান মালিকরা। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও তাই কাজ পেয়ে আনন্দিত। বাগান মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া মজুরি দিয়ে সংসারের দুঃখ কিছুটা হলেও দূর হবে বলে আশাবাদী শ্রমিকরা। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ২ লাখ ৭৭ হাজার ৬২২ বিঘা জমিতে ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০টি আম গাছ রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৯১১ বিঘা বেশি জমিতে আমের গাছ রয়েছে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৮ হাজার ৪৭০ দশমিক ৫ বিঘা, শিবগঞ্জে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪ দশমিক ৫ বিঘা, গোমস্তাপুরে ৩১ হাজার ৫২৩ দশমিক ৪ বিঘা, নাচেলের ২৮ হাজার ২৭৩ দশমিক ৯৫ বিঘা, ভোলাহাট উপজেলায় ২৭ হাজার ৩৪০ দশমিক ২ বিঘা জমিতে আম গাছ রয়েছে।   সদর উপজেলার ইসলামপুরে ২৪ বিঘার একটি বাগান কিনেছেন মুনিরুল ইসলাম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত বারের চেয়ে এবার বেশি আম উৎপাদনের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। গত বছরে জলবায়ুর কারণে আমের মুকুল ফুটার সময় বৃষ্টি হয়নি। এছাড়াও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অন্য জেলার ব্যাপারিরা আম কিনতে আসতে পারেনি। ফলে সে সময় মৌসুমের প্রথম দিকে আমের দাম পাওয়া যায়নি।  অনেক লোকসান হয়েছে। এবার করোনার মধ্যে আমের বাজারদর যেন না কমে এদিক দিয়ে আম সংশ্লিষ্টরা খেয়াল রাখবেন বলে আমরা আশা করছি। ’

শিবগঞ্জের আরেক আম বাগানি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবারের মৌসুমের প্রথম দিক থেকে আবহাওয়া ভালো আছে। ফলে গতবারের চেয়ে এবার আমের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  আমের ফলন ভালো হলে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ  সদর উপজেলার ঝিলিম এলাকার একটি বাগানে আমের গাছে কিটনাষক প্রয়োগ করছিলেন সাইফুল, গোলাম রাব্বানি, সোহেল, আব্দুল আজিম। তারা রাইজিংবিডিকে জানান, করোনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কাজ ছিলোনা, ধার দেনা করে আমাদের সংসার চালাতে হয়েছে।  এমন কী বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা তুলে সংসারে ব্যয় করতে হয়েছে। এখন আমরা কাজ পেয়েছি।  প্রত্যেকেই প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করি। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন কাজ থাকে। এমন করে কাজের গতি চলতে থাকলে, ধার আর লোনের টাকা শোধ করা যাবে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি আমের গাছে মুকুল এসেছে। এবারের মৌসুমে ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন। আবহওয়া ভালো থাকালে আমের ফলন ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি।’

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন গাছের সঠিক পরিচর্যা না নিলে, আম গাছে ছত্রাক ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে। কৃষকরা যদি গাছে ছত্রাক নাশক স্প্রে করে তাহলে এ ভারসাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।’