সারা বাংলা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ঘেষেঁই চলছে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ। এছাড়া ভাটার চিমনির ধোঁয়া, মাটি ও ইট নিয়ে আসা যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের শব্দ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে বায়ু দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় জনসাধারণ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মধ্য কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে ৩ টি ইটভাটা। বিদ্যালয় থেকে ১০ মিটার দূরেই এএমবি-২ নামের ইটভাটাটির অবস্থান। এর একটু সামনেই রয়েছে হাসান ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটা। পাশেই রয়েছে হাসনাহেনা ব্রিকস নামে আরো একটি ভাটা। 

ইটভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দিনদিন বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এছাড়াও লোকালয়ের কয়েক হাজার বাসিন্দা ভাটার ধোঁয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়াও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরির আইনগত বিধি নিষেধ থাকলেও কৃষিজমি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব বলেন, স্কুলের পাশে ইটভাটা থাকায় ধোঁয়া ও বালুর কারণে জীবন অতিষ্ট। স্কুলের ছেলে মেয়েরা ছোট তাই বালু ও  ধোঁয়াতে তাদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। অনেকবার বলা হলেও এসব ভাটার মালিকরা রাস্তায় পানি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করেনি। শিক্ষকরা ব্রিক ফিল্ড মালিকদের কিছু বললেও তারা শিক্ষকদের কথা শুনেনা। বড় বড় ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় রাস্তারও অবস্থা বেহাল দশা।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে ৩ টা ব্রিক ফিল্ড আছে। এই সব ভাটার কারণে পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। আগে মানুষ জমিতে ৩ ফসল করতো অথচ এখন এক ফসলও  করা সম্ভব হয় না। আমাদের ঘরের টিন গুলো ঝলসে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফল ফলাদি গাছে এথন আর ফল দেয়না। ফলের মৌসুমে ফল খেতে পারিনা। ইটভাটা গুলো সারারাত মাটি কাটে। রাস্তা গুলো নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া স্কুলের কোমলমতি শিশুরা দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। আমরা ইটভাটাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

দক্ষিণ মধ্য কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী  তাওসিফ রহমান, নাওফাল হক ও ফাইজা বিনতে ইসলাম অভিযোগ করে  বলে, স্কুলে ক্লাসের সময় ইটভাটার ধোঁয়া সরাসরি আমাদের নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করছে। চোখে বালু ও ধোঁয়া ঢুকে যায়। ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখেও সমস্যা হয়। ইটভাটাগুলো সরিয়ে ফেললে আমরা পড়াশোনা ঠিকভাবে করতে পারবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএমবি-২ ইটভাটার মালিক মো. মানিক বলেন, আমি একটা কাজে এলাকার বাহিরে আছি। আমাদের ইটভাটার উচ্চ আদালত থেকে স্টে অর্ডার রয়েছে। এর বেশি এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। 

ইটভাটার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে জানতে চাইলে মো. মানিক বলেন, আমার সন্তানও এই বিদ্যালয়ে পড়ে ৷ আমার ছেলেরতো কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা। এছাড়াও ইটভাটা নির্মাণের পর বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।

হাসান ব্রিকসের মালিক মো. হাসান বলেন, আমার ভাটাটি ঝিকঝাক পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও ধুলোবালির জন্য প্রতিদিন দুইজন লোক রাখা হয়েছে রাস্তায় পানি ছিটানোর জন্য। আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে। এদিক দিয়ে স্কুলের ছেলেমেয়েরা চলাফেরা করেনা।

বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুন নাহার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা থাকাটা দুঃখজনক। এতে করে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।