সারা বাংলা

৬ বছর ধরে রমজানের হাসি-কান্নার সঙ্গী বালতি 

একটি বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ চোখ পড়েছে কালো একটি বালতির দিকে। মনে হচ্ছে বালতির ভেতরে কোনো শিশু হাবুডুবু খাচ্ছে। আগ্রহ বাড়লো, কাছে গিয়ে দেখলাম বালতিতে পানি নেই, কিন্তু শিশুটি ওটার মধ্যে খেলা করছে। শিশুর মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে বালতির মধ্যে কেন? মা উত্তর দিতেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো, হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। তারপর যা বললেন, তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।   

শিশুটির নাম রমজান। বয়স মাত্র ছয় বছর। হাত পা থেকেও নেই। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না, দাঁড়াতে পারে না। জন্মের পর থেকে তার হাত পা বাঁকা। মুখে শুধুই হুম হুম শব্দ করে, কথা বলতে পারে না। হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করে। জন্মের পর থেকে এমন কষ্টের জীবন কাটছে তার। 

পাশে ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলা করলেও মাটিতে বসে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু চিৎকার করে রমজান। তার বাবার নাম দুদু মিয়া। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের ধুলজিরী গ্রামের বাসিন্দা। দারিদ্র্যতার কারণে ছেলেকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই হামাগুড়ি দিয়েই চলে আদরের সন্তান।

রমজানের মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, হুইল চেয়ার কিনবো কেমনে। তবে কেউ যদি ছেলেটাকে হুইল চেয়ার কিন্না দিত, তাইলে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতো।’

রমজানের বাবা দুদু মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জমিজমা নেই। দিনমজুর করে সংসার চলে। ছেলেকে এভাবে দেখতে খুব কষ্ট লাগে। ‌কেমন বাবা আমি ছেলেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারি না।’ তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছে ছেলের জন্য একটা হুইল চেয়ার চেয়েছেন।

আড়াইবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান (খুরশীদ উদ্দিন) বলেন, প্রতিবন্ধী রমজানের বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে আমার নজরে এসেছে। আমরা রমজানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে একটি হুইল চেয়ার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া পারভেজ বলেন, রমজানের পরিবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। রমজানের পরিবারকে আসতে বলেছি। প্রতিবন্ধী শিশুটির সার্বিক দিক দেখে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে দ্রুত এবং পারিবারিক অবকাঠামো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, প্রয়োজনে শিশুর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে-8801701-798832 এই নম্বরে কল দিতে পারেন। 

সংবাদ লেখক: শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।