সারা বাংলা

সয়াবিন তেলের সঙ্গে কিনতে হচ্ছে আটা-চা-মসলা

জয়পুরহাটে দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় পেরে উঠছেন না স্বল্প আয়ের মানুষ। জেলার তেল সরবরাহকারীরা বলছেন, উৎপাদন কম বলে তারা চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না। আর এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বিক্রিতে। আবার অনেক কোম্পানি বোতলজাত তেল কিনতে অন্য পণ্য কেনার শর্ত দিচ্ছেন।

এক মাসে আগে বোতলজাত সয়াবিনের খুচরা দর ছিল লিটার প্রতি ১৬০ টাকা, আর খোলা তেলের দাম ছিল প্রতিকেজি ১৭০ টাকা। এখন সেখানে খুচরা বাজারে বোতলজাত তেল প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা এবং খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৯২ থেকে ১৯৫ টাকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই ভোজ্য তেলের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এর সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। 

কোনো কোনো কোম্পানি তাদের কাছ থেকে তেল কিনতে শর্ত অনুযায়ী বোতলজাত তেলের সঙ্গে আটা, সরিষার তেল, চাল, মসলা বা চা পাতা কিনতে বাধ্য করছেন। 

জয়পুরহাট শহরের আদর্শপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন ও পৌর এলাকার ছানোয়ার হোসেন বিশ্বাসহ অনেক ক্রেতারা সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তারা জানান, প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের সঙ্গে প্রয়োজন না হলেও এক কেজি আটা নিতে হচ্ছে। কোথাও আবার মসলা, চাল, সরিষার তেল বা চা পাতা কিনতে হচ্ছে বলেও জানান ক্রেতারা।

একদিকে মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে বোতলজাত তেলের সঙ্গে আটা, চাল, মসলা, চাসহ অন্যান্য সামগ্রী নিতে খুচরা বিক্রেতাদের বাধ্য করা হচ্ছে। আবার এমন শর্ত দিয়ে খুচরা ক্রেতারদের কাছে বোতলজাত তেল বিক্রি করা কষ্টকর, তাই খোলা তেল বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। 

জয়পুরহাট শহরের কলেজ রোড এলাকার সাহা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সীতারাম কুমার সাহা, জগন্নাথ ট্রেডার্সের জগন্নাথ সাহা, স্টেশন রোডের আনোয়ার হোসেন বাবু, মাছুয়া বাজারের জিয়া, ফারুখ হোসেনসহ অনেক মুদি ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, খোলা তেলের মোটামুটি সরবরাহ আছে, কিন্তু বোতলজাত তেলের সঙ্গে কোম্পানিগুলো আটা, চাল, সরিষার তেল, মসলা, চা পাতা বিক্রি করছে, যা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চাহিদা থাকলেও তারা বোতলজাত তেলের পরিবর্তে খোলা তেলই বেশি বিক্রি করছেন বলে জানান।

ভোজ্য সয়াবিন তেলের এমন সংকটাবস্থার কথা স্বীকার করে পরিবেশকরা বলছেন,  উৎপাদন কম হচ্ছে বলে চাহিদার বিপরীতে তারাও সরবরাহ কম পাচ্ছেন। এছাড়াও আটা, চাল, মসলা, চাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বিক্রি জরুরি বলে শর্ত দিয়ে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। 

জয়পুরহাট জেলার অন্যতম পরিবেশক সদর রাস্তার সিও কলোনী এলাকার মোল্ল্যা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামছুল আলম মোাল্লার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুই মাস আগে থেকে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনে বেশ চাপ পড়েছে বলে কিছুটা সংকট আছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় যে সব পণ্য সামগ্রী সয়াবিন তেল কিনতে যোগ করা হয়েছে, সেগুলো শর্ত বলা ঠিক হবে না, কোম্পানির ব্যবসায়িক নীতি বলেও জানান এই পরিবেশক।

এ নিয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা ভোক্তা অধিকার সংক্ষরণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফজলে এলাহী জাানান, ‘যেহেতু জয়পুরহাটে সয়াবিন তেল উৎপাদন হয় না, তাই আমরা শুধু পাইকারি ও খুচরা মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্যই দেখভাল করতে পারি। বাজার সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি মূল্যের অসামঞ্জস্যতা দেখামাত্রই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’