সারা বাংলা

হাওয়াই মিঠাই বেচে ঈদের পোশাক কিনবে আ. আলিম

আব্দুল আলিম। ১২ বছর বয়সী কিশোর। হাওয়াই মিঠাইওয়ালা। রাস্তার একপাশ ধরে মিষ্টি আর সাদা রঙের মিঠাই নিয়ে মার্কেটের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। মনটা খারাপ থাকায় হেলেদুলে পথ চলছিল সে। ঈদের জন্য সবাই নতুন কাপড় কিনছে, কিনতে পারছে না সে। এনিয়ে বড় দুশ্চিন্তা যেন তার পিছু ছাড়ছে না। ঈদ উদযাপন করতে গেলে নতুন পোশাক পরতে হয়, এটা যে তার মনে এখনো গাঁথা।

আব্দুল আলিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা দুলাল। তিনি জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। এখন বাড়িতে তার মা আর ভাইকে নিয়ে তিনজনের বসবাস। তার বাবা প্রবাস থেকে টাকা পাঠান আর সে টাকা দিয়েই চলে সংসার, ধারদেনাও পরিশোধ করা হয়।  

আব্দুল আলিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর স্কুলের ছাত্র। করোনায় দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার পড়ালেখা বন্ধ ছিল। পড়ালেখা বন্ধ হলেও দৈনিক হাতখরচ বন্ধ হয়নি। দিনের হাতখরচ চালানোর জন্য হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে সে।

সে বললো, আমার বাবাতো প্রবাসে থাকে, সেখান থেকে দেশে টাকা পাঠায়। ওই টাকায় আমাদের সংসার চলে। আমাদের তেমন সমস্যা হয় না। নিজের হাত খরচের জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি এসব হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছি।

এবার ঈদুল ফিতরে কিছু কেনাকাটা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নে সে বলে, গত কয়েকদিন ধরে খুব গরম পড়েছে। রোজা রেখে মিঠাই বেচতে পারা যায় না। রাস্তায় লোকও কম থাকে। সব মিলিয়ে বেচা বিক্রি কম। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মিঠাই বেচে যা টাকা আয় হবে, সে টাকা দিয়ে ঈদের পোশাক কিনবো। নতুন পোশাকে ঈদের নামাজ পড়ার অনুভূতিটা খুব দারুণ লাগে।

এখনো পর্যন্ত মিঠাই বেচে কিছু টাকা জমিয়েছে সে, সব টাকা একসাথে করে তার মাকে একটা শাড়ি কিনে ঈদের উপহার হিসেবে দিতে চান পরিশ্রমী এ কিশোর আব্দুল আলিম।

হাওয়াই মিঠাই বানাতে সাহায্য করেন তার বড় ভাই নুর আলম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনার সময় আমার ছোট ভাই আব্দুল আলিম ঘুরে বেড়াতো। স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ালেখাও তেমন করত না। এরপর থেকে বাড়িতে হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলাম। সে ভাবনা থেকে বাড়িতে হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে আব্দুল আলিমকে জেলা শহরে মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এলাকাগুলোতে বেচতে পাঠাই।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে হাওয়াই মিঠাই বানানোর জন্য সব ধরনের যন্ত্রপাতিসহ আছে। এ মিঠাইগুলো ভোক্তাদের কথা ভেবে মানসম্মত পরিবেশে বানানো হয়। সারাদিনে ৫০-৬০টা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।