সারা বাংলা

নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শোলাকিয়ায় নামাজের প্রস্তুতি

করোনা মহামারির কারণে গত দু’ বছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ১৯৫তম নামাজ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে। 

এবারের ঈদের জামাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

গত দু’ বছর শোলাকিয়া মাঠ ছিল মুসল্লিশূন্য। এ বছর পুরোদমে চলছে ঈদুল ফিতরের জামাতের প্রস্তুতি। আশপাশের মুসুল্লিরা ঈদগাহ ময়দান ঘুরে ঘুরে দেখছেন। সকলের চোখেমুখে বিষন্নতা কাটিয়ে এখন খুশির আমেজ।  

শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম মো. গোলাপ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে পরপর দু’ বছর ঈদের জামাত হয়নি এখানে। এ বছর মুসুল্লিদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার মুসুল্লিদের উপস্থিতি পূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। 

শোলাকিয়া মাঠের প্রবেশদ্বার, মিম্বর, সুরক্ষা দেয়ালে রঙ দেয়া, মাঠে দাগ কাটা ও বালু ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ওজুখানা, টয়লেটও সংস্কার করা হয়েছে। এখন চলছে শহর জুড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। প্রতিবারের মতো এবারও রেল কর্তৃপক্ষ দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসুল্লিদের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। মুসুল্লিদের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকসহ কয়েকটি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার বাচ্চু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার এই ৬৫ বছর বয়সে কোনোদিন ঈদের নামাজ শোলাকিয়া মাঠ ছাড়া আদায় করিনি। কিন্তু গত দু’ বছর যে কীভাবে কেটেছে, তা বলা মুশকিল। লাখ লাখ মুসুল্লির সঙ্গে আল্লাহ কাছে হাত তুলে যে শান্তি পাই, সেটি আর কোথাও পাই না। আর কোনদিনও যেন এখানে ঈদের জামাত বন্ধ না থাকে, সে আশা করি।’ 

মাঠের সব প্রস্তুতি বার বার পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। মুসুল্লিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চারস্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগাহ। 

জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম রাইজিংবিডিকে জানান, শোলাকিয়া ঈদগাহে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত হয়। মাঠে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। টুপি, জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছু মাঠে নেওয়া যাবে না। ব্যাগ, মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা চান।

পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ রাইজিংবিডিকে জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসুল্লিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় মাঠে সার্বক্ষণিক পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নজরদারি করবে। ঈদগাহ মাঠসহ প্রবেশপথে ক্যামেরা, ড্রোন ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।  

 মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, ঈদ জামাত শুরুর আগে ছোড়া হবে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সঙ্কেত দেওয়া হবে। 

কিশোরগঞ্জ পৌরসভা মেয়র মাহমুদ পারভেজ রাইজিংবিডিকে জানান, এরই মধ্যে শহর ও ঈদগাহ মাঠ সুন্দর করে সাজানো এবং মাঠকে নামাজের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে শোলাকিয়া মাঠে আগত মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিকেল টিম এবং দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।

জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন ‘শোলাকিয়া’ নামে পরিচিত।