সারা বাংলা

কালবৈশাখী উড়িয়ে নিলো ঈদ আনন্দ

‘তামান উড়ায় লেগেইচে। মোর ঘর, মোর বেটার ঘর তামানলা ভাঙে লেগেল। নাতীনডার নয়া জামালাও উড়ে গেল।’ কাঁদতে কাঁদতে শনিবার (৩০ এপ্রিল) এভাবেই রাইজিংবিডির কাছে কালবৈশাখী ঝড়ে হওয়া ক্ষতির বিবরণ দিচ্ছিলেন ষাটোর্ধ জামিলা খাতুন।

জামিলা খাতুনের বাসা ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসও ইউনিয়নে। আগের রাতে হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে তার বাসার বেড়া ও টিন উড়ে গেছে। হয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

জামিলার পুত্র সাদেকুল জানান, আমি পেশায় একজন দিনমজুর। স্বল্প আয়ে চলে আমার পরিবার। ঈদের ঠিক দুই দিন আগে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। জানি না এই বাসা আবার কীভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে। নিজেদের জন্য এখনও কিছু কিনতে পারি নাই। তবে ছোট ৯ বছরের মেয়েটার জন্যে ঈদের জামা কিনছিলাম, সেটাও ঝড়ে উড়ে গেছে।

শুক্রবার রাতের ঝড়ে সাদেকুলের মতো জেলার প্রায় হাজারো পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বাগানের ফল, কৃষিজ জমি ও গাছপালা।

শহরের আকচা মুচিপাড়ার বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে হামার ঈদ আনন্দ উড়ে চলে গেছে। হামরা এলা অসহায়। থাকার ঘর ভেঙে গেছে। ঘরের ভেতর পানি পড়ে সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। হামার আর কিছুই থাকিলনি। টিনের খবর নাই। কোনদিকে উড়ে চলে গেছে জানি না’।

এই গ্রামে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রহমান আলী, মোহম্মদ আলী, মানিক ইসলাম, শরীফ হোসেন দুলাল হোসেন, তোফাজ্জল ইসলামসহ অনেকেই। 

সদরের আখানগর ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম বলেন, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ  মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।। আমাদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। 

গ্রামের কৃষক হাসেম আলী বলেন, তিন বিঘা ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে আমার। অনেক গাছ পড়ে গেছে ভুট্টা খেতে। এবার তিন-চার বার ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। আমি শেষ। 

বাগান ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, ছয়টি গাছের বাগানে ৬ মন আম মিলবে না। এবারে ফলের বাজারে চরম সংকট দেখা দিতে পারে। কয়েক দফা শিলাবৃষ্টি ও মধ্যরাতের ঝড় সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখানে আর ঈদের আনন্দ বলে কিছু রইলো না। 

সমাজকর্মী রাজিবুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা ঝড়ের কবলে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এই জেলাতে ত্রাণ ও প্রণোদনা দরকার। দেশের বিত্তবানদের সহায়তায় পারে এখানকার মানুষের ঈদের আনন্দ ফিরিয়ে আনতে। 

এই বিষয়ে জেলা বন অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, একটু সময় লাগবে গোটা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানাতে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। 

একই কথা জানান জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।

জেলা প্রশাসক মাহাবুব রহমান বলেন, ঝড়ের কবলে যাদের ক্ষতি হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সমাজের ভাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতি পারে একে অপরের সহায়ক হতে। আমরা সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের যতদূর পারি সহযোগিতা করবো।