সারা বাংলা

ট্রেনে কাজ শুরু করলেন টিটিই শফিকুল

কর্মস্থলে ফেরার পর ট্রেনে কাজ শুরু করলেন পাবনার ঈশ্বরদীর আলোচিত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (১০ মে) খুলনা থেকে চিলহাাটিগামী আন্তঃনগর রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে তিনি তার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ট্রেনটি বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

এর আগে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর সকালে ১০টার দিকে স্টেশনে যান শফিকুল ইসলাম। সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর ট্রেন আসার পর তিনি ট্রেনে উঠে যাত্রীদের টিকিট চেকিং এর মাধ্যমে নিজের কাজ শুরু করেন। 

এ সময় এক প্রতিক্রিয়ায় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার (৯ মে) কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পর আমাকে ট্রেনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়। আজ রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে কাজ শুরু করলাম। কাজ শুরু করতে পেরে মানসিকভাবে শান্তি অনুভব করছি।’ আগের মতোই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান শফিকুল ইসলাম। 

রেলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। এ সময় ট্রেনের দায়িত্বরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন ট্রেন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১০৫০ টাকায় জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট বানিয়ে দেন। এ সময় ট্রেনে দায়িত্বরত এ্যাটেনডেন্টসহ অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন। এরপর টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। 

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ফোনের পরিপ্রেক্ষিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয় বলে জানান মন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপা। 

বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ওঠে মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীর একজন ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা হলেন ইয়াসমিন আক্তার নিপা।

শনিবার (৭ মে) স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেন, ‘‘ছেলেদের সঙ্গে অসদাচরণ করার কারণে টিটিইকে আমি বদলি করতে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে বলেছিলাম। তখন শাম্মী আমাকে জানান ‘বদলি নয়, বরখাস্তই করে দিচ্ছেন’। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলেন।’’ 

রোববার (০৮ মে) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করার কথা জানান রেলমন্ত্রী। এ ছাড়া পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। আমার কোনো ইনভলভমেন্ট এখানে ছিল না। বলা হচ্ছে যে মন্ত্রীর কারণে এমনটা ঘটছে। আমার যদি কিছু করার থাকত তাহলে তো সরাসরিই করতে পারতাম। কারও সাহায্যের তো দরকার হবে না। মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক না।’

প্রত্যাহার আদেশ পেয়ে সোমবার (০৯ মে) দুপুরে নিজ কর্মস্থল ঈশ্বরদীর হেডকোয়াটারে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম।