সারা বাংলা

বাগেরহাটে বাগদা চিংড়িতে মড়ক, দিশেহারা চাষিরা

সাদা সোনা খ্যাত বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি। চলতি মৌসুমের শুরুতেই দাবদাহ ও ভাইরাসের কারণে আশঙ্কাজনক হারে মারা যেতে শুরু করেছে চিংড়ি। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি চাষে এমন বিপর্যয়ে বাগেরহাটের অধিকাংশ চাষি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ভাইরাসের পাশাপাশি ঘেরে পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এছাড়া চাষিরা মৎস্য বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে বলে দাবি করেছে দপ্তরটি। তবে এ জেলায় ঠিক কি পরিমাণ চিংড়ি চাষি বা ঘের মালিক এবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তা জানাতে পারেনি মৎস্য বিভাগ।  

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। জেলায় চিংড়ি চাষি ও ঘের মালিক আছেন প্রায় ৭৩ হাজার।  

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার চিংড়ি চাষি রিয়াজ শিকদার বলেন, ‘ঋণ করে ছয় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলাম। কিন্তু চিংড়ি যখন ৭০-৮০ পিসে কেজি বা গ্রেড হয়েছে, তখনই ভাইরাস লেগে সব মরে গেল। কিছুদিন পরেই চিংড়ি ধরার কথা ছিল। কিন্তু ধরার আগেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’ 

উপজেলার যাত্রাপুরের শেখ বাদশা বলেন, ‘২০১৭ সালে পড়ালেখার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ জায়গা নিয়ে চিংড়ি ও সাদামাছ চাষ শুরু করি। প্রথম বছর মোটামুটি লাভোবান হয়েছিলাম।  কিন্তু দুই বছর পর থেকে লোকসান শুরু হয়। গত দুই বছরে লাভের বদলে শুধু ক্ষতি হচ্ছে। প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু টাকা আয় করি, তাও এই চিংড়ি চাষের পিছনে চলে যায়। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।’

চিতলমারী উপজেলার পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের সুভাষ মজুমদার বলেন, ‘আমার ঘেরে ভাইরাস ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। ভাইরাসের কারণে সর্বশান্ত হতে বসেছি। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না । নানা পরামর্শ নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। রাতারাতি ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে।’  

রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি রাজীব সরদার বলেন, ‘আমাদের এখানে ৯০ ভাগ ঘেরের চিংড়ি মরে শেষ। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা ছিল চলতি মৌসুমে ঘেরের পরিবেশ বদলে যাবে এবং গত বছর যা লোকসান হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু এই মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব কিনা জানিনা।’ 

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, ‘দিন দিন বাগেরহাটে চিংড়ি চাষের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। একদিকে পোনা সঙ্কট অপরদিকে রোগের প্রাদুর্ভাব। এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ি চাষি ও ঘের মালিকদের পেশা বদলানো ছাড়া উপায় থাকবে না।’ 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, ‘বাগেরহাটের ৯ উপজেলার মধ্যে রামপালের দুইটি ইউনিয়নে বেশি চিংড়ি মারা যাওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে সেখান থেকে চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কি কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, সেটি বের করার চেষ্টা চলছে। আমরা ধারণা করছি অতিরিক্ত গরম, হোয়াইট স্পট ভাইরাস বা মৌসুমের শেষে ভাইরাস যুক্ত চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ ঘের প্রস্ততের আগে চাষিরা ব্লিচিং পাউডারসহ ভাইরাস মুক্ত করণের যেসব পদ্ধতি আছে তা প্রয়োগ না করে গতানুগতিক ভাবে ঘের প্রস্তত করে চিংড়ি ছাড়েন। এছাড়া চিংড়ি পোনা ছাড়ার আগে পোনা ভাইরাস মুক্ত কিনা তাও পরীক্ষা করেন না। চাষিদের ঘের প্রস্তুত ও পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলেন।’