সারা বাংলা

ঋণ থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা: পুলিশ 

নরসিংদীতে স্ত্রীর নামে এনজিও এবং স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের চাপ থেকে মুক্তি, জুয়া খেলার টাকা না থাকা ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ।

মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।

সোমবার (২৩ মে) বিকেলে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হকের আদালতে মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন গিয়াস উদ্দিন শেখ।

নরসিংদীর পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন পিবিআইয়ের এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান। এ সময় তিনি জানান, পেশায় রঙ মিস্ত্রি ভাবলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখ একজন জুয়াড়ী। জুয়া খেলার টাকার সংকট হলে তার মাথা ঠিক থাকে না। বিভিন্ন এনজিওসহ শ্যালক, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে স্ত্রী রহিমার নামে ১২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এর বিপরীতে মাসে ২২ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হতো তাকে। ঋণগ্রহীতা মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয়— এমন বিশ্বাসে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন গিয়াস। পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার (২১ মে) গভীর রাতে ছুরিকাঘাত ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘুমন্ত স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যা করেন তিনি। পরে রাতে তার বাড়িতে অবস্থানের কথা সন্তানেরা বলে দেবে এমন আশঙ্কায় ঘুমন্ত সন্তানদেরও ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। 

পুলিশ সুপার বলেন, সকালে স্বজনদের ফোনে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন এবং রাতে বাড়িতে ছিলেন না বলে জানান গিয়াস উদ্দিন। এ সময় প্রতিপক্ষ চাচাতো ভাই রেনু শেখের ওপর হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। রেনু শেখের সঙ্গে বাড়ির রাস্তার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল তার।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, পেশাগত কাজে বাড়ির বাইরে অবস্থান করাসহ তার দেওয়া অন্যান্য তথ্য সন্দেহজনক হওয়ায় গিয়াসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পিবিআই। পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি। আটকের পর তার দেখানো মতো ওই গ্রামের গঙ্গাজলি বিল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও জঙ্গল থেকে রক্তমাখা ক্রিকেট ব্যাট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠান।

রোববার (২২ মে) রাতে নিহত রহিমা বেগমের ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে বেলাব থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যার দায় স্বীকারের পর ওই মামলায় গিয়াস উদ্দিন শেখকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। 

পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, এক নারীর সঙ্গে ফোনে গিয়াস উদ্দিন শেখের নিয়মিত কথা বলার তথ্যও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঋণের তথ্য যাচাইসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে আরও কেউ এই নির্মম হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রোববার (২২ মে) সকালে প্রতিবেশীদের ডাকাডাকিতে সাড়া না দেওয়ায় ঘরে ঢুকে তিনজনের মরদেহ দেখতে পেয়ে বেলাব থানায় খবর দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পাটুলী ইউনিয়নের ভাবলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখের বসতঘর থেকে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৬), একমাত্র ছেলে রাব্বি শেখ (১২) ও মেয়ে রাকিবা শেখের (৭) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।