সারা বাংলা

চাষিদের গোলা খালি হওয়ার পর দাম বাড়ল ধানের 

হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে এক সপ্তাহ আগেও ধানের দাম ছিল প্রতি মণ ৬৫০ টাকা। এ রকম দামে ধান বিক্রি করে চাষিদের গোলা খালি প্রায়। আর এখন এসে ধানের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি মণ ৯৫০ টাকা। মাঝখানে শুধু ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হলেন চাষিরা। 

মৌসুমের শুরুর দিকে মিল মালিক এবং আড়ৎদাররা ধান ক্রয় করা বন্ধ রেখেছিলেন। এ জন্য প্রান্তিক কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।  

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুর দিকে হবিগঞ্জে ধান কাটার ধুম ছিল। তখন ক্রেতারা মোটা ধান ৬০০ টাকা এবং চিকন ধান ৬৫০ টাকা মণে কিনেছেন। সেই ধানই তারা গত কয়েকদিন ধরে কিনছেন বেশি দামে।  সর্বশেষ শুক্রবার (২৭ মে) জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামে মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা এবং চিকন ধান ৯৮০ টাকা মণ দরে। কিন্তু এরই মধ্যে শতকরা ৯০ শতাংশ কৃষকের ধান বিক্রি প্রায় শেষ। হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক এখন বেশিদামে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন।

হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া জানান, তিনি প্রায় ৬০০ মণ ধান বিক্রি করেছেন ৬০০-৬৫০ টাকা দরে। এখন প্রতি মণ ধান ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও তার কোনো লাভ হয়নি। বাকিতে আনা সার-কীটনাশকের দাম দিতে এবং জমির আগামী মৌসুমের বর্গা দেওয়ার জন্য তিনি কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্য লোকসানেই তার এবারের বোরো মৌসুম শেষ করতে হয়েছে।

একই কথা জানিয়েছেন হিলালপুর গ্রামের সামছুল আলম, জাহিদুল আলম, তুহেল মিয়া এবং মনির হোসেন নামে আরও কয়েকজন চাষি। তারা বলেন, শুরুর দিকে ধানের পাইকাররা সিন্ডিকেট করে বাজারে ধানের দাম বাড়াননি। সে সময় কম দামে ক্রয় করা ধান এখন তারা উচ্চ মূল্যে বিক্রি করবেন। সারাবছর কৃষকের কষ্টের ধানের মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগীরাই নিয়ে যাচ্ছে। 

বানিয়াচং উপজেলার কৃষক তৌফিক মিয়া বলেন, প্রতি বছরই কৃষকের গোলায় ধান থাকাকালে মূল্য কম থাকে। যখনই কৃষকের ধান বিক্রি শেষের দিকে আসে, তখন দাম বাড়ে। এভাবে চলতে থাকলে তিনি বোরো আবাদ করবেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার মৌ আটোরাইস মিলের মালিক ফজলে রাব্বী রাসেল জানান, তিনি চট্টগ্রামে চাল সরবরাহ করেন। ধান কাটা শুরুর দিকে সেখানে চালের চাহিদা না থাকায় তিনি ধান ক্রয় করেননি। এখন চাহিদা বেড়েছে জন্য তিনি ধান ক্রয় করছেন। তাই হয়তো এখন দামও বেড়েছে। 

তিনি আরও জানান, হাওর থেকে ধান এনে প্রক্রিয়া করতে অনেক টাকা খরচ হয়। এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে ধান ক্রয় করেন তারা।   

হবিগঞ্জ মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে মিল মালিকরা ধান ক্রয় করেননি। এজন্য চাষিদের লোকসান হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়েছেন।