সারা বাংলা

নদীর তীরে ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী সন্ন্যাসতলায় মন্দিরের পাশে বসেছে দুই দিনব্যাপী ঘুড়ির মেলা। গ্রামীণ এ মেলা সন্ন্যাসতলীর ঘুড়ির মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলার সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে না পারলেও জনশ্রুতি রয়েছে, সন্ন্যাসী পূজাকে ঘিরে ২০০ বছরের অধিক সময় আগে মেলাটির উৎপত্তি ঘটে। সেই থেকে প্রতিবছর বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার বিকেলে বসে গ্রামীণ এ মেলা। মেলায় আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের আগমন ঘটে।

জয়পুরহাটের এই সন্ন্যাসতলীতে সনাতন ধর্মের লোকজন মন্দিরে সন্ন্যাসীকে পূজা দিয়ে দিনটি উৎযাপন করলেও এটি মূলত হিন্দু-মুসলিমের একটি মিলনমেলা। বিকেলের পর সময় গড়ানোর সাথে সাথে মেলায় মানুষের ঢল নামে। মেলাকে ঘিরে জামাই-স্বজনদের আপ্যায়ন চলে মেলা সংলগ্ন আশপাশের কয়েক গ্রামে। রঙ বেরঙয়ের ঘুড়ি মেলার মূল আকর্ষণ হলেও বর্তমানে মেলায় বসে রকমারি মিষ্টির দোকান। যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও চিনির শাহী জিলাপি আকৃষ্ট করে দর্শকদের। মেলায় বাঁশ কাঠ ও লোহার তৈরি সংসারের বিভিন্ন সামগ্রী ও মাছ ধরার নানা যন্ত্রের আমদানিও নজর কাড়ে মানুষের। শিশুদের খেলাধুলার জিনিসপত্র এবং কসমেটিক্স’র দোকানও বসে দুই দিনের এ মেলায়। জামাই-মেয়ের পাশাপাশি স্বজনদের আপ্যায়নের রীতি এলাকায় চলে আসছে এ মেলাকে ঘিরেই। 

স্থানীয় জিয়াপুর গ্রামের হারুনুর রশীদ, মাতাপুর গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, আমাদের বাবা দাদারা এই মেলা করতে এসেছিলেন। আমরাও এই মেলাতে কেনাকাটা করতে আসি।

এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। মেলাতে আসা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার অমিত মণ্ডল, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সাগর হোসেন বলেন- প্রতি বছর এই সন্ন্যাসতলী মেলাতে আসি আমরা শুধু ঘুড়ি কিনতে। ঘুড়ি ছাড়াও এখানে সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যায়।

সন্ন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও বসেছে মেলা। এই মেলা প্রায় দু’শ বছরের  পুরাতন। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে এটি পরিচালনা করে থাকি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এ মেলায় আসেন।

ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সন্ন্যাসতলী মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এ মেলা।