সারা বাংলা

পরীক্ষা শেষে মুঠোফোন ফেরত চাওয়ায় প্রার্থীকে পিটিয়ে আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষা শেষে জমাকৃত মুঠোফোন ফেরত চাওয়ায় কাজী মোশারফ হোসেন নামে এক প্রার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেকটর (এনডিসি) কিশোর দাসের বিরুদ্ধে।

রোববার (১২ জুন) রাতে ওই প্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হকের কাছে এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কাজী মোশারফ হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের চাপিয়া গ্রামের মৃত কাজী আবদুল কাদেরের ছেলে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোশারফ হোসেন জেলার রাজস্ব প্রশাসনের অধীনে সার্টিফিকেট পেশকার পদে আবেদন করেন। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

মোশারফ ওই পদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে শহরতলীর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল এন্ড কলেজে যান। পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ছিল ৫৫৭৯। সেসময় সঙ্গে থাকা মুঠোফোনটি দায়িত্বরত হল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন তিনি। পরীক্ষা শেষে মুঠোফোন ফেরত চাইলে দায়িত্বরত শিক্ষকরা নানা রকম তালবাহানা শুরু করেন। পরে মুঠোফোনটি নেওয়ার জন্য তাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।

শুক্রবার (১০ জুন) বিকেল তিনটায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে মুঠোফোন চাইলে দিতে অসম্মতি জানান কিশোর কুমার দাস। সেসময় ওই প্রার্থীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তিনি। একপর্যায়ে অফিসের দরজা বন্ধ করে মোশারফকে মারার জন্য দুই পিয়নকে নির্দেশ দেন কিশোর কুমার দাস। পিয়নের মারধরের সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি নিজেই লাঠি দিয়ে তাকে প্রহার করা শুরু করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে মুঠোফোন দিয়ে মোশারফকে তারা বাইরে ফেলে দেন।

মোশারফ কোনো উপায় না পেয়ে সাহায্যের জন্য ৯৯৯-এ কল করেন। পরে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতিকুল্লাহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোববার দুপুরে ছাড়পত্র নিয়ে মোশারফ নিজ বাড়ি কসবার চাপিয়া গ্রামে যান।

কাজী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমার শরীরের এখনো ব্যথা আছে। এরমধ্যে বাম পায়ে ব্যথা সবচেয়ে বেশি। হাঁটতে সমস্যা হয়। সংসদ সদস্য আনিসুল হকের কাছে রোববার রাতে ইউনিয়নের বয়োজেষ্ঠরাসহ আমি এ ঘটনার বিচার চেয়েছি। তিনি যে নির্দেশনা দিবেন তাই করব।’

সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল্লাহ বলেন, ‘৯৯৯-এ কল পাওয়ার প্রায় ১০মিনিটের মধ্যে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তখন মাগরিবের সময় ছিল। ওই তরুণকে আমি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মসজিদের সামনে পেয়েছি। তখন মোশারফ কান্না করে বলছিল, কোনো এক ম্যাজিস্ট্রেট তাকে মেরেছে। আমি তাকে রিকশায় তুলে দিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘পরীক্ষায় নির্দেশনা ছিল ঘড়ি ও মুঠোফোনসহ কোনো ডিভাইস পরীক্ষার হলে আনা যাবে না। যারা এনেছিল কেন্দ্রে এসব জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরে পরীক্ষার কক্ষে তল্লাশি করলে কয়েক জনের কাছ থেকে মুঠোফোন ও ঘড়ি জব্দ করা হয়। বিকেলে কার্যালয়ে আসলে মুচলেকা নিয়ে মুঠোফোন ও ঘড়ি ফেরত দেয়া হয়। সেসময় এক প্রার্থী লোকজন জমায়েত করার চেষ্টা করে। পরে ট্রেজারির দায়িত্বরত পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’